গ্যাস সঙ্কটের কারণে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ ওই কারখানাটি পুনরায় চালু করা যাবে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ধারণা দিতে পারেনি।
কেবল এই কারখানাটি নয়, বুধবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতেও সারা দিন গ্যাসের চাপ কম ছিল।
বাংলাদেশে গত কিছু দিন ধরে বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে কথা হচ্ছে, যার প্রেক্ষাপটে সরকার নানা ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে। মাত্র দু’দিন আগে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এবার গ্যাস সঙ্কটের বিষয়টি সামনে এলো।
গ্যাসের ঘাটতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কী বলছে
সরকারি যে প্রতিষ্ঠানটি খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন এবং বাজারজাত করার কাজ করে সেই পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বিবিসিকে বলেছেন, দামের কারণে ‘স্পট মার্কেট’ থেকে গ্যাস কিনে ঘাটতি মেটানোর প্রক্রিয়া স্থগিত করায় সরবরাহে টান পড়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত দৈনিক সরবারহ করে ৩,০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই গ্যাসের মধ্যে দেশীয় উৎপাদন প্রতিদিন ২,৩০০ থেকে ২,৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এর বাইরে চাহিদা মেটাতে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের কাতার ও ওমান থেকে। তা থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবারহ করা হয় লোকাল গ্রিডে।
এছাড়া, দিনে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবারহ করা হতো স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা গ্যাস থেকে। দাম বুঝে বিভিন্ন সূত্র থেকে তা আমদানি করা হতো।
আহসান বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে কেনা হয় যে গ্যাস সেটি জুলাই থেকে বন্ধ করা হয়েছে, যার কারণে গ্যাসের সরবরাহ ৭-৮ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আহসান বলেন, যেসব সেবা বা পণ্য উৎপাদনে গ্যাস লাগে অর্থাৎ বিদ্যুৎ, সার কিংবা শিল্প কারখানাকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
কিন্তু গ্যাসের সম্ভাব্য সঙ্কট সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা সরকারকে আগেই সতর্ক করেছিলেন। কয়েক বছর আগে থেকে পেট্রোবাংলা তাদের প্রজেকশনে দেখিয়ে আসছে যে দেশে গ্যাসের রিজার্ভ নিম্নমুখী, কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
কত দিনে মিটবে সঙ্কট
আহসান বলছেন, চলতি বছর থেকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে আগামী চার বছরে ৪৬টি কূপ খনন করে গ্যাস অনুসন্ধান চালানো হবে।
এই ৪৬টি কূপের মধ্যে অনুসন্ধান কূপ, উন্নয়ন কূপ এবং ওয়ার্কওভার অর্থাৎ আগে খনন করা কূপে নতুন অনুসন্ধান চালানো হবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে দিনে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে বর্তমান সঙ্কটের আশু সমাধান তাতে হবে না ।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, গ্যাসের বর্তমান সঙ্কট আরো প্রায় তিন মাস চলবে। শীত মৌসুমে সাধারণত গ্যাসের চাহিদা হ্রাস পায়, ফলে অক্টোবর নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।