নন্দিত কথাসাহিত্যিক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ১০ম প্রয়াণ দিবস আজ। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য যেমন নতুন রূপ পেয়েছে, তেমনি উঠে এসেছে হিমু-মিসির আলি-রূপার মতো অসংখ্য জনপ্রিয় সব চরিত্র। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নির্মাণ করেছেন অনন্য সব নাটক, সিনেমা ও গান। তার হাত ধরেই শোবিজে অনেক তারকার আগমন ঘটেছে, এমনকি সম্মাননাও পেয়েছেন।
গুণী এই কথাসাহিত্যিকের হাত ধরেই শোবিজে পা রাখা শিল্পীদের একজন ডা. এজাজুল ইসলাম, যিনি ডা. এজাজ নামে পরিচিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান তিনি। হুমায়ূন আহমেদের পাঁচটি সিনেমাসহ বহু নাটকে কাজ করেছেন ডা. এজাজ। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে প্রথম দেখা ও কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার মেডিসিনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করি। এরপর কয়েক বছর পার হলেও সার্টিফিকেট নেওয়া হয়নি। ১৯৯২ সালে সার্টিফিকেট তুলতে গেলে জানতে পারি, প্রফেসর ড. এম এ করিম হুমায়ূন আহমেদের স্কুলবন্ধু। আর তিনি তখন হুমায়ূন স্যারের অফিসে। সেই অজুহাতে স্যারের কাকরাইলের অফিসে ছুটে যাই। সেখানেই স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম কথা ও দেখা।
প্রথম আলাপচারিতায় হুমায়ূন আহমেদ জানতে চান, আমি সম্পর্কে জানতে চান। স্যার যখন জানলেন, আমি গাজীপুরে থাকি ও চাকরি করি। তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি তো গাজীপুরে শুটিং করি। মাঝে মধ্যেই নানা ঝামেলা হয়। যদি সময় হয় আমাকে একটু সহযোগিতা কর।” প্রথম দেখায় স্যারের এমন প্রস্তাব শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। এর দুই সপ্তাহ পর স্যার ফোন করে আমাকে বলেন, “আমি সবুজ সাথী নামে একটি সিরিয়াল করব। এটার জন্য লোকেশন ও থাকার জায়গা দরকার। তুমি ব্যবস্থা করে দাও?” এরপরই স্যারের হাত ধরে তার সঙ্গে আমার পথচলা শুরু।’
হুমায়ুন আহমেদের পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি নাটকের অভিনয় করেছেন ফারুক আহমেদ। তার ভাষ্য, ‘হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে টানা ২০ বছর কাজ করেছি। পরিচালনায় আসার আগেই তার লেখা ‘অচিন বৃক্ষ’ ও ‘মাটির পিঞ্জিরা’য় অভিনয় করেছি। “আজ রবিবার” নাটকে মতি চরিত্রটি করার পর তিনি আমাকে মতি নামে ডাকতেন। সবাই গল্প বলতে পারেন না, হুমায়ূন আহমেদ পারতেন। স্যার ছিলেন গল্পের জাদুকর ছিলেন। আর কিভাবে অভিনয় করিয়ে নিতে হয় সেটা স্যার খুব সুন্দর ভাবেই পারতেন।’
সেলিম চৌধুরীকে দিয়ে মরমী কবি হাসন রাজার ১৩টা গান করিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। নুহাশ চলচ্চিত্রের ব্যানার থেকে গানগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের ‘দুই দুয়ারি’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমাগুলোতেও গান গেয়েছেন সেলিম চৌধুরী। গেয়েছেন নাটকেও।
এই শিল্পীর ভাষ্য, ‘১৯৯৪–৯৫ সালের দিকে হাসন রাজা উৎসবে হুমায়ূন আহমেদকে প্রধান অতিথি করে নিয়ে যাই। সেখানে তিনি আমার গাওয়া বেশ কিছু গান শোনেন। এরপর ঢাকার বাসায় একটা অনুষ্ঠানে স্যার আমাকে আমন্ত্রণ জানান। সেই অনুষ্ঠানে আমি ‘আইজ পাশা খেলব রে শ্যাম’ গানটা গাই। যা স্যারের খুব ভালো লাগে। তখন তিনি আমাকে ৮-১০ বার গানটা গাইতে বললেন। শুধু তাই না, গানটা রেকর্ডও করেন। পরে এই গানটাই ‘ওইজা বোর্ড’ নাটকে ব্যবহার করলেন।’
সেলিম চৌধুরী আরও বলেন, ‘তার সঙ্গে যখন কাজ শুরু করি, এর আগেই কিন্তু মার্কেটে আমার তিনটি অডিও ক্যাসেট আসে। বিদেশে গিয়েও গান করে এসেছি। কিন্তু তেমন একটা পরিচিতি পাইনি। স্যারের সঙ্গে কাজ শুরু করার পর অন্য রকম এক পরিচিতি পেলাম।’