সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দূর্গাবাটি এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার চার দিন অতিবাহিত হলেও প্রবল জোয়ারের কারণে তা এখনও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তাই লোকালয়ে পানি প্রবেশের স্রোতধারা আটকানো যায়নি।
এতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নসহ আশপাশের ১৫টি গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। প্রতিদিন জোয়ারভাটায় প্লাবিত হচ্ছে বাড়িঘর। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় খাবার পানির সংকট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রবল জোয়ারের কারণে রিং বাঁধের কাজ খুব ধীর গতিতে আগাচ্ছে। কাজ সম্পন্ন করতে আরও কয়েকদিন সময় লেগে যাবে।
দূর্গাবাটি গ্রামের নারায়ন মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, দূর্গাবাটির বিভিন্ন অংশে কোটি টাকার কাজ করা হলেও ভেঙে যাওয়া অংশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাটির কোনো কাজ করা হয়নি। এছাড়া প্রভাবশালীরা নদীর চর থেকে কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করায় চর দেবে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ তদারকি করেননি।
একই গ্রামের তপতী মন্ডল বলেন, বছর সাতেক আগে ঠিক একই জায়গা থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে দূর্গাবাটি গ্রামের মিষ্টি জলের উৎসগুলো ভেসে যায়। আর এবার ভেঙে জোয়ারের সময় বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ভাটার সময় পানি নেমে গেলেও জোয়ারের সময় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রান্না করার কোনো জায়গা নেই। গরু ছাগল হাঁস মুরগির বাচ্চা নিয়ে খুব দুর্ভোগে রয়েছি।
স্থানীয় সংবাদ কর্মী স.ম ওসমান গনী বলেন, তীব্র স্রোত ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে কোনভাবে পানি আটকানো যাচ্ছে না। বারবার চেষ্টা করেও রিং বাঁধ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে স্থানীয়া। যত দিন যাচ্ছে তত নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে, অসহায় হয়ে পড়ছে এখনকার মানুষ। ইতোমধ্যে তীব্র খাবার পানির সংকটে দেখা দিয়েছে। রান্না করার কোন উপায় না থাকায় শুকনা খাবার খেয়ে জীবনযাপন করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় শিশুরা রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল জানান, বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে শুকনো খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে দু’একদিনের মধ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব হলে দুর্ভোগ কমে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, খোলপেটুয়া নদীর চর দেবে যাওয়ার কারণে ৪০ মিটার বাঁধ ধ্বসে নদীতে চলে গেছে। আমরা ১৬০ মিটার রিংবাঁধ দেব। বাঁশ পাইলিংয়ের কাজ চলছে। তবে প্রবল জোয়ারের কারনে কাজ ধীর গতিতে আগাচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার জিওব্যাগ ও ১ লাখ সিনথেটিক ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি দু’একদিনের ভেতরে পানি আটকাতে সক্ষম হবো।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ওই অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট নিরসনে একটি পানির প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা এই অবস্থা থেকে নিরসন পাবো।