২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে নিয়েছিল ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৪৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম হওয়ায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক সেক্টর থেকে এই আগ্রাসী ঋণ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরেও ব্যাপক হারে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সরকার ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা বাড়ালে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরও কমার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণ শ্লথ গতির ছিল, অর্থবছরের শেষ সময়ে অর্থাৎ জুন মাসে ব্যাংক ঋণ অনেক বেড়েছে। কারণ সরকারের রাজস্ব আহরণ ও সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ কম এসেছে। যার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য ব্যাংক ঋণ বাড়ায় সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের মে পর্যন্ত রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা, যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেটের প্রায় আড়াই লাখ কোটিই থাকছে ঘাটতি। এই ঘাটতি বিদেশি ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মেটাবে সরকার। চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়াও বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে সরকার। টাকার মান ও সুদ হার কমায় ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। তাই সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। গত চার অর্থবছরের বাজেটে দেশের ব্যাংক খাতে সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত গতি না এলে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা আরও বাড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ঘোষিত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। যেমন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগে ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধারের সুদ বা রেপো হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করে দিয়েছে। এখন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরও কমতে পারে। বেসরকারি বিনিয়োগই দেশের কর্মসংস্থানের বড় উৎস। এছাড়া নতুন অর্থবছরে ১ লাখ ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, বাংলাদেশে ছয় কোটির বেশি লোক কাজ করেন। এর মধ্যে মাত্র ২০ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শিক্ষক আছেন। বাকি সব কর্মসংস্থান বেসরকারি খাতের। প্রতিবছর ১৪ থেকে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি খাতে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ শ্লথ হলে কর্মসংস্থান কমবে, মানুষের আয় কমবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়তে পারে।