চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। উত্তেজনায় কাঁপছে দুই শহর। শেষ দিনের প্রচার প্রচারণাসহ নানা দিক তুলে ধরে প্রতিবেদন করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদকরা
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে নামতে পারলেন না বিএনপি সমর্থিত অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস এখনো আত্মগোপনে। বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার আসামি এসব প্রার্থীরা জামিন না পাওয়ায় প্রচারে আসতে পারেননি। তাদের পক্ষে পরিবার, নিকটাত্মীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই গণসংযোগের কাজ সেরেছেন কোনোমতে। তবে তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর তুলনায় তাদের গণসংযোগ ছিল খুবই সীমিত। ভোটের দিনেও প্রার্থীরা নিজের ভোট দিতে পারবেন কিনা-তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়াও পেয়েছেন তিনি। আবার আব্বাসের পক্ষে বিএনপি ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও পৃথকভাবে গণসংযোগ চালিয়েছেন। ঢাকা সিটির উত্তরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মাঠে নামলেও দেখা যায়নি তার বাবা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে। ফৌজদারি মামলার আসামি হয়ে তিনিও আত্মগোপনে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত ৩১ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার খড়গ ঝুলছে। একই অবস্থা উত্তর সিটির বিএনপি সমর্থিত ৩০ প্রার্থীরও। অবরোধ-হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মামলা থেকে হত্যা মামলা পর্যন্ত রয়েছে এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশ কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ। গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন অন্তত ৬০ কাউন্সিলর প্রার্থী।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রায় সবাই মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিনও পাচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তিন সিটিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় হয়রানি করছে। নির্বাচন কমিশন ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে পারেনি। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।’জানা যায়, দক্ষিণ সিটিতে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. গোলাম হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হামিদুল হক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শামসুল হুদা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মকবুল আহমেদ আকন্দ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের হারুনুর রশিদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোকমান হোসেন ফকির, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রফিকুল হক, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জাফর মো. সাদেকুর রহমান, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ এখনো মাঠে নামতে পারেননি।আত্মগোপনে রয়েছেন জাহিদ হোসেন নোয়াব (ওয়ার্ড-২০), খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব (ওয়ার্ড-২১), সাঈদ হোসেন সোহেল (ওয়ার্ড-২৩), শফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু (ওয়ার্ড-২৪), হাজী আলতাফ হোসেন (ওয়ার্ড-২৫), মীর আশরাফ আলী আজম (ওয়ার্ড-২৬), আনোয়ার পারভেজ বাদল (ওয়ার্ড-২৮), শফিকুল ইসলাম রাসেল (ওয়ার্ড-২৯), হাজী মো. আবদুর রাজ্জাক (ওয়ার্ড-৩০), মো. রফিকুল ইসলাম রাসেল (ওয়ার্ড-৩১), মো. মোহন (ওয়ার্ড-৩৩), হাজী আবেদ উদ্দিন আহমেদ (ওয়ার্ড-৩৪), ইয়াকুব সরকার (ওয়ার্ড-৩৫), এবিএম পারভেজ রেজা (ওয়ার্ড-৩৭), মেহেরুন্নেছা (ওয়ার্ড-৩৮), মো. লিয়াকত আলী (ওয়ার্ড-৪১), আবদুল কাদির (ওয়ার্ড-৪৫), আতিকুল্লাহ আতিক (ওয়ার্ড-৪৮), রাইছেল হাসান হবি (ওয়ার্ড-৫০), বাদল রানা (ওয়ার্ড-৫২), মো. মীর হোসেন (ওয়ার্ড-৫৩), মোজাম্মেল হোসেন (ওয়ার্ড-৫৪), শহিদুল হক (ওয়ার্ড-৫৫) ও মো. নাঈম (ওয়ার্ড-৫৬)।ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, কফিল উদ্দিন (ওয়ার্ড-১), কাজী আলী ইমাম আসাদ (ওয়ার্ড-৩), মো. আনোয়ার হোসেন (ওয়ার্ড-৫), মাহফুজ হোসাইন খান সুমন (ওয়ার্ড-৬), দেলোয়ার হোসেন দুলু (ওয়ার্ড-৭), মো. মাসুদ খান (ওয়ার্ড-১০), রুনু আক্তার (ওয়ার্ড-১২), আক্তার হোসেন জিল্লু, (ওয়ার্ড-১৪), ফারুক হোসেন ভূঁইয়া (ওয়ার্ড-১৯), মো. হাবিব উল্লাহ হবি (ওয়ার্ড-২০), এজিএম সামছুল হক সামসু (ওয়ার্ড-২১), ফয়েজ আহমেদ (ওয়ার্ড-২২), আবুল মেছের (ওয়ার্ড-২৩), সাইফুল আলম কাজল (ওয়ার্ড-২৫), নবী সোলায়মান (ওয়ার্ড-২৬), মো. এনায়েতুল হাফিজ (ওয়ার্ড-২৯), ফরিদ উদ্দিন ফরহাদ (ওয়ার্ড-৩১), আতিকুল ইসলাম মতিন (ওয়ার্ড-৩২) ও সাহাবুদ্দিন মুন্নাও (ওয়ার্ড-৩৩) এখনো আড়ালে অবস্থান করে নির্বাচন করছেন।সূত্র জানায়, কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাসায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররাও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এ কারণে মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপি সমর্থিত বেশির ভাগ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।