বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় অভিযুক্ত পি কে হালদারকে আবারও আদালতে তোলা হচ্ছে। শুক্রবার (১৫ জুলাই) কলকাতার নগর ও দায়রা আদালতে ষষ্ঠবারের মতো তোলা হবে পি কে হালদারসহ আরও ৬ জনকে।
এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিয়েছে ভারতের আর্থিক দুর্নীতি বিষয়ক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। শুক্রবার বিচারকের সামনে সেই অভিযোগপত্র পেশ করা হবে। এর আগে সবশেষ ৫ জুলাই তাদের আদালতে তোলা হয়। সেদিনই বিচারক তাদের ১০ দিনের জেল হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদকের কাছে থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাট ভৈদিক ভিলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পি কে হালদার ও তার আরও পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করে ইডি।
এরপর প্রথম দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড ও পরে আরও চার দফায় প্রায় ৬০ দিন জেল হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ৬০ দিনের মাথায় সোমবার (১১ জুলাই) কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)- ১ আদালতে প্রাথমিক চার্জশিট দাখিল করেন ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী।
এ সময় অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, পি কে হালদারসহ মোট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে অভিযোগপত্র গঠন করে কলকাতার আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। তবে নতুন কোনো ধারায় এখনো তাদের অভিযুক্ত করা হয়নি।
অরিজিৎ আরও জানান, প্রাথমিক অভিযোগপত্রে ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং’ আইনে করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। ওই আইনের তিন-এ নম্বর ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দুটি সংস্থার নাম এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইডির আইনজীবী আরও বলেন, এ মামলার আওতায় ভারতে এখন পর্যন্ত ৪১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাড়ি-জমি মিলিয়ে ১৮টি স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা।
অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, একাধিক ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে বিনিয়োগ করেছিলেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। কোম্পানির পরিচালক হিসেবে উঠে এসেছিল প্রায় ৫৫ জন প্রভাবশালী বাংলাদেশির নাম। যদিও গত ৫ জুলাই শুনানির শেষ দিন ইডির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভারতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলায় তদন্তের বাইরে রাখা হবে আলোচিত বাংলাদেশিদের নাম।
এদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আলী হায়দার বলেন, এ অভিযোগপত্র গঠনের ফলে আমার মক্কেলদের জামিন পেতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। অভিযোগপত্রের অনুলিপি আমার হাতে এখনও আসেনি, এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পি কে হালদার বাংলাদেশের ব্যাংকবহির্ভূত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ফতুর করেছেন। লুট করেছেন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের আমানত লুট করে পালিয়ে গেছেন দেশের বাইরে।
কানাডা-ভারতসহ নানা স্থানে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি এ জালিয়াতের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে চলতি বছরের মে মাসে তাকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।