সাভার প্রতিনিধি : আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় দিনে দুপুরে গুলি করে ও কুপিয়ে ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়ালিউল্লাহ (৪৫) ও নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৬ জন আহত হয়ে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের প্রায় সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের হাসপাতালটির নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিউতে) রাখা হয়েছে। ঘটনার পর তিন দিন অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিনিয়ত আহতদের সুস্থতা কামনা করে অনাহারে-অর্ধাহারে হাসপাতালের মেঝেতেই অবস্থান করছেন তাদের স্বজনরা।
সরেজমিন সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার আইসিইউর সামনে কাউকে চেয়ারে আবার কাউকে মেঝেতে কাপড় বিছিয়ে প্রিয়জনের সুস্থতার প্রতীক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আহতদের খোঁজখবর নেওয়ার একপর্যায়ে আহত মোমিনুর রহমানের স্ত্রী বৃষ্টি রহমান কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
আইসিউতে চিকিৎসাধীন মোমিনুর রহমান কাঠগড়া বাজারে একটি পানের আড়তে কাজ করে ছেলে তুহিন (৭), মেয়ে তানজিলা (১) ও স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় মোবারকের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ছেলে তুহিন ওই এলাকার ফ্রেন্ডস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। মোটামুটিভাবে চলে যাচ্ছিল তাদের দিন। ঘটনার সময় পার্শ্ববর্তী মসজিদের মাইকিং শুনে বাসা থেকে দৌড়ে এসেই পড়েন ডাকাতদের কবলে। ডাকাতদের বাধা দিতে গিয়ে বোমার আঘাতে ডান পা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়।
ছোট ছেলেমেয়ে দুটিকে বাসায় দাদীর কাছে রেখে সারাক্ষণ হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে বৃষ্টি রহমানকে। মেয়েটা মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে আর বাবার অসুস্থতার কারণে ছেলেও পরীক্ষা দিতে পারেনি। গত দু’দিনে স্বামীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ ও পরীক্ষা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যাংক কিংবা সরকারের তরফ থেকে নগদ কোনো সহায়তা না পাওয়ায় স্বামীর চিকিৎসা এবং সুস্থতার চিন্তায় কান্নায় হাসপাতালের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। টাকা ছাড়া ওষুধ দিচ্ছে না ফার্মেসি থেকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গেলেও জমা দিতে হয় নগদ টাকা। আহত মোমিনুর কোনোদিন সুস্থ হয়ে কাজ করতে পারবেন কিনা, তাও জানা নেই তার। তবুও ওষুধের টাকা জোগাড় করতে সারাক্ষণ এদিক-সেদিক ফোন করে কান্নাকাটির পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়া ওষুধ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোয় একই রকম বিপদে রয়েছেন আহত পারভেজ, শাজাহান ও লাইফ সাপোর্টে থাকা আইয়ুব আলীর পরিবারের সদস্যরা।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউ প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম বলেন, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আহত রোগীরা এখনো শঙ্কামুক্ত নন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউসিতে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন- মো. পারভেজ (১৯), মো. নুর ইসলাম (৬০), মো. জমির (২৫), মো. আইয়ুব আলী (৮৪), মো. নুর মোহাম্মদ (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম (৩৫), মো. সাজ্জাদ আলী (৩৫), মো. সাইফুল (২৭), মো. রমজান (৫০), মো. শাজাহান (২৮), মো. মোমিনুর রহমান (৩৫), মো. আইয়ুব আলী (৭০), মো. হামিদ আলী (৫০), মো. শাহাদাত (৩০), মো. রফিক (২০), আব্দুল সালাম (৪০), আব্দুল হক (৪৫) ও মো. সোহেল (৩৫)।