দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের আনন্দ নেই মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকারের কোথাও কোনো কর্তৃত্ব নেই।
রোববার ঈদুল আজহার দিন সকালে শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘এ সরকার বলতে আমরা যেটা মনে করি যে, কোনো সুশাসন নেই, কোনো গভর্নেন্স নেই। শুধুমাত্র একটা দিকে তাদের লক্ষ্য, দুর্নীতি করা এবং প্রকৃতপক্ষে দেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে।’
শনিবার হজরত আলী নামে এক ট্রেনযাত্রী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গে নিজের বাড়িতে পৌঁছাতে পারেননি- ফেসবুকে তার দেয়া এমন পোস্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে ট্রেনের কথা আপনি বলছেন- এগুলোর কোনো অথরিটি আছে, কোনো কর্তৃত্ব আছে- সেটাই মনে হয় না। রাস্তা-ঘাটে আপনারা দেখেছেন প্রতিদিন কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলের সময়সূচির বিপর্যয়, দেরি করে ছাড়া, দেরি করে যাওয়া। আসলে মূল কথাটা হচ্ছে যে, এই সরকারের কোথাও কোনো কর্তৃত্ব নেই। মানুষের এই যে দুর্ভোগ-ভোগান্তি, তাদের কোনো আনন্দ নেই।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অবস্থা আপনারা দেখেছেন যে, বিদ্যুৎ নিয়ে এতো বড়াই করেছেন সেই বিদ্যুতে আজকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে তিন-চার ঘণ্টা করে। এর মূল কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। কারণ পাওয়ার প্ল্যান্ট যেগুলো নিয়ে আসা হয়েছে এটা সম্পূর্ণভাবে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে আনা হয়েছে। এসব প্রকল্প স্থাপনে কোনো আন্তর্জাতিক টেন্ডার পর্যন্ত হয়নি এবং এমন আইন করা হয়েছে যে, এখানে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে তাহলে কোনো রকমের মামলা করা যাবে না। অর্থাৎ ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে কোনো প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে এটা কোনোভাবেই হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনাই সরকারের নেই। গ্যাসের কথা বলছে, আজকে এলএনজি নেয়ার জন্যে এই সরকার গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। তারা পুরোপুরিভাবে বিদেশে থেকে এলএনজি আমদানি করে। ১/২টি কোম্পানিকে সহযোগিতা করার জন্য তারা এই সমস্ত দুর্নীতি করছে। প্রকৃতপক্ষে এই সরকার একটা লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটা লুটেরা দলের পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের উন্নয়নের যে মিথ, যে ধোঁয়া তারা তোলেন- এতে তাদের দুইটি লক্ষ্য আছে। একটি হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের পকেট ভারী করা এবং আরেকটি হচ্ছে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যে তারা উন্নয়ন করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এদেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। আজকে এখনো এদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে। শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দরিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।’
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সবসময় দলীয় কর্মসূচি শেষ করে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতেন। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের স্থায়ী কমিটি সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রতি ঈদে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবর জিয়ারত করে আসছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে দলের প্রতিষ্ঠাতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তারা।
এ সময় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।