কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধের পর বিক্ষোভ করেছে কর্মরত সাংবাদিকরা। শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুরে হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলমের প্রত্যাহারের দাবি করেন। একই সময়ে শনিবার থেকে স্থানীয় সব দৈনিকের প্রকাশনা বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে বেলা ১১টায় শহরের পৌর কবরস্থানে জানাজা শেষে হাসিবুর রহমান রুবেলের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
দাফন শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় রুবেল হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে কবরস্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাংবাদিকরা। মিছিলটি কলেজ মোড় হয়ে মজমপুর ট্রাফিক কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে তারা কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখেন।
সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রুবেল নিখোঁজ হওয়ার পর ওই দিন রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কিন্তু রুবেলকে জীবিত উদ্ধারে পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যে কারণে রুবেলকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। রুবেলের হত্যাকাণ্ডের পেছনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততাকে দায়ী করেন তারা।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের কোনো ঈদ নেই, কোনো আনন্দ নেই। অবিলম্বে রুবেলের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা না হলে কুষ্টিয়া অচল করে দেওয়া হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের না ধরতে পারলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ডাক্তার গোলাম মওলা, সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু, কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখ, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, সোহেল রানা, কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান আলী ও শরীফ বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরে অবরোধ চলাকালীন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি সাংবাদিকদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হওয়ার পর থেকে ব্যাপক কাজ করেছে পুলিশ। এরমধ্যে রুবেল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। যে কোনো সময় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে জেলার ছয় উপজেলায় সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার থেকে কুষ্টিয়ার সব স্থানীয় দৈনিক অনির্দিষ্টকালের জন্য একযোগে প্রকাশনা বন্ধ রাখা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও, মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশসহ ৮ দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
৩ জুলাই (রোববার) রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার সিঙ্গার মোড়ে হাসিবুর রহমান রুবেল পত্রিকা অফিসে কাজ করছিলেন। এ সময় মুঠোফোনে একটি কল আসলে তিনি কাউকে কিছু না বলেই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তার সবগুলো মোবাইল ও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই সাংবাদিক রুবেলের ছোট ভাই মাহবুব কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচের তার অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়।