মোহাম্মদ হাফিজ মাত্রই বোলিং করার অনুমতি পেয়েছেন। আর বাংলাদেশ যখন ২৫১ রানের টার্গেটে মিরপুরে ব্যাট করতে নামে তখন আসে চমক। নতুন বল তুলে দেয়া হয় হাফিজের হাতে। অন্যপ্রান্ত থেকে আক্রমণ করেন পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে দলের সাথে যোগ দেয়া উমর গুল। এই ম্যাচে সবকিছুই নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পাকিস্তান। প্রথমে তিন খেলোয়াড়কে বাদ দিয়েছে। তারপর বোলিং ওপেন করেছে স্পিন ও পেসের সমন্বয় ঘটিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশও সতর্ক। প্রথম দুই ম্যাচে জেতা দলটি তামিম ইকবালের চওড়া ব্যাটের দিকে স্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে। অন্যপ্রান্ত থেকে সৌম্য এই ম্যাচেও আগ্রাসনের সুবাস ছড়াচ্ছিলেন। গুলকে পরপর দুই বাউন্ডারি মেরে মানসিকতার প্রকাশটা ঘটিয়েছেন সৌম্য। শেষ খবর, ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭ রান বাংলাদেশের। সৌম্য ১৯ ও তামিম ৬ রানে ব্যাট করছিলেন।
আঘাতের পর আঘাত। একের পর আঘাত। আঘাত এবং আঘাত। পাথর ভাঙ্গার আঘাত নয়। আঘাত পাকিস্তানের ইনিংস ভাঙ্গার। প্রথম অবস্থায় পাকিস্তানের ইনিংসটা সেভাবে নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছিলো না। কিন্তু আজহার আলীর সেঞ্চুরির পরই বাংলাদেশ ঘুরে দাড়ায়। আর ঘুরে দাঁড়ানোর অনবদ্য এক গল্প লিখে দেখতে না দেখতেই পাকিস্তানের ইনিংসটাকে গুটিয়ে দেবার পথে নিয়ে যায় টাইগাররা। ২ উইকেটে ২০৩ রান থেকে ২৫০ রানেই অল আউট পাকিস্তান। আবার নেচে ওঠে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের বাংলাওয়াশ দেবার সম্ভাবনা।
পাকিস্তানের প্রথম উইকেট জুটির রান ৯১। তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৯৮ রান। দুটি দারুণ জুটিতে পাকিস্তান ভেবেছিলো দারুণ এক ইনিংস গড়ার কথা। কিন্তু শ্রমিকের প্রত্যয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রত্যয় ভাংতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। তারই ফল একের পর এক উইকেট শিকার। সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজা দলের দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। আগের ম্যাচ ছিলো মাশরাফির ১৫০তম ম্যাচ। এটি সাকিবের দেড়শোতম ম্যাচ। আর দেড়শোতম ম্যাচ সাকিব উদযাপন করলেন সেঞ্চুরিয়ান আজহারের উইকেট নিয়ে। পরের ওভারে হারিস সোহেলকে (৫২) তুলে নিলেন মাশরাফি। এর পরের ওভারে আবার রিজওয়ানকে শিকার করেন সাকিব। দুই ওভার পর ফাওয়াদ হন মাশরাফির শিকার। লোয়ার মিডল অর্ডারটা দুজনে মিলে এভাবেই ভেঙ্গে দিলেন। আর লোয়ার অর্ডার ভেঙ্গেছে রুবেলের দুই উইকেট। আরাফাত সানি লেজের শেষটা কেটে দিলেন। ৪৭ রানে পাকিস্তানের ৮ উইকেট তুলে নিয়ে ফেরার অনন্য এক গল্প লিখেছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
অথচ এদিনের শুরুটা ছিলো পাকিস্তানের। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমে পরিণত মাথার পরিচয় দিয়েছেন তরুণ সামি আসলাম। মনেই হয়নি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। ১০ ওভারে ৫৮ রান আসে। তারপরও এগিয়ে যায় আজহার ও সামির জুটি। শেষমেষ নাসির হন ত্রাণকর্তা। ৪৫ রান করে বিদায় নেন সামি। একটু পরই আরাফাত সানি ফিরিয়ে দেন এই সিরিজে ফ্লপ হাফিজকে। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে সিরিজের ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান হারিস সোহেলকে নিয়ে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়ে তোলেন অধিনায়ক আজহার। ফাস্ট বোলাররা সাফল্য পাননি দেখে একে একে হাতের সব স্পিনারকেই কাজে লাগিয়ে দেখলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। ১১১ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করলেন আজহার। মনে হচ্ছিলো আরো বড় কিছু করবেন আজহার ও তার দল। কিন্তু সাকিব সেঞ্চুরির পর আর বাড়তে দেননি আজহারকে। ১০১ রানেই ফিরেছেন আজহার। এরপর শুরু পাকিস্তানের পতনের গল্প। মাশরাফি শিকার করেন হারিসকে। সাকিবের সাথে উইকেট শিকারের প্রতিযোগিতায় যেন নামেন মাশরাফি। তাতে উদ্দিপ্ত হন রুবেল, সানিরাও। ফলাফল, টাইগারদের চমৎকার এক ঘুরে দাড়ানোর গল্প। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, সাকিব, রুবেল, আরাফাত সানি। ১ উইকেট নাসিরের।