ঢাকা: গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে।
কবে দূর হবে লোডশেডিং সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
লোডশেডিং এর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) আব্দুর রউফ খান বলেন, আমাদের আজকে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭০০ মেগাওয়াট, চাহিদা আবার ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠা-নামা করে। গত তিন দিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে, এর আগে আমাদের চাহিদার পুরোটাই বিদ্যুৎ আমরা পেয়েছি। এই লোডশেডিংকালে আমরা কখনো ১৩০০ মেগাওয়াট, কখনো ১৪০০ বা ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরে এটা নির্ভর করে এবং বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হয়।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে জ্বালানির বাজারে। যে এলএনজি আগে পাঁচ ডলারে পাওয়া যেত, এখন সেটির দাম ৩৫ থেকে ৪০ ডলার। জার্মানি, ইতালির মতো উন্নত রাষ্ট্রও এখন লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্যাস না পাওয়ায় দেশের বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। ফলে সারা দেশে বেড়ে গেছে লোডশেডিং।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গড়ে সরবরাহ করা হতো তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কয়েক দিন থেকে গ্যাসের সরবরাহ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এই পরিস্থিতি খুব বেশিদিন থাকবে না আশা করি। এবছরের মধ্যেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানিকৃত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। বর্তমান সংকট আমরা সবাই মিলেই পার করবো। সবার কাছে একটাই অনুরোধ, আসুন আমরা সবাই গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হই।
অপরদিকে বুধবার (৬ জুলাই) সকালে মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘবে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক রুটিন করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন একটাই উপায়, কখন, কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে সেটার একটা রুটিন তৈরি করা। যাতে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে। মানুষের কষ্টটা যেন আমরা লাঘব করতে পারি। সে বিষয়ে আমাদের এখন নজর দিতে হবে। আমি আশা করি দেশবাসী আমাদের সহযোগিতা করবেন। যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।