করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস নিয়ে নতুন করে ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যদিও স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় ইতোমধ্যে ঈদের ছুটি ঘোষণা শুরু হয়েছে। তারপরেও ঈদের ছুটির পর সংক্রমণের অবস্থা বিশ্লেøষণ করে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাসে ফেরা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। অবশ্য কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা করোনার ঊর্ধ্বগতির হার পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে এই কমিটি স্কুল-কলেজ খোলা রাখা যাবে কি না সে বিষয়ে পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত জানাবে।
অন্য দিকে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে আবারো অনলাইনকেন্দ্রিক শিক্ষায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বেশ কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক পৃৃথক ক্লাস ও পরীক্ষার শিডিউলও প্রস্তুত করছে। ঈদের পর যদি কোনো কারণে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয় তাহলেও যেন বিকল্প পন্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যায় সেই প্রস্তুতিও তারা নিয়ে রাখছেন।
এ দিকে শুধু করোনা সংক্রমণই নয়, সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় এক হাজার এক শ’র বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পুনঃনির্মাণ কিংবা সংস্কার ছাড়া পুনরায় ক্লাস চালু করা সম্ভব হবে না।
আগামী ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে সরকারি- বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ রোববার থেকে ছুটি শুরু হচ্ছে। আর সরকারি-বেসরকারি কলেজে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে আগামীকাল সোমবার থেকে। অপর দিকে মাদরাসায় ঈদুল আজহার ছুটি গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়ে গেছে। মাধ্যমিক স্কুলগুলো ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে ১৫ দিন বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি কলেজের ছুটির তালিকা অনুসারে, ঈদের ছুটি শেষে ১৬ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে। অর্থাৎ ঈদের এই ছুটিতে করোনা সংক্রমণ বাড়লে সঙ্গত কারণেই দীর্ঘায়িত হতে পারে ছুটি। তাই সবকিছু নির্ভর করছে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর।
ইতোমধ্যে অনলাইনকেন্দ্রিক ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও। অনেক প্রতিষ্ঠানই ঈদুল আজহার পরে পরিস্থিতি কী হয় সে দিকে নজর রাখছে। ইতোমধ্যে দেশে করোনা সংক্রমণের হারও ১৫ শতাংশের বেশি দাঁড়িয়েছে। তাই পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সে দিকেই এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নজর।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকবে। বুয়েট ছাত্রকল্যাণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, কোভিড-১৯ বিবেচনায় আমরা আপাতত সশরীরে ক্লাস বন্ধ করেছি। পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করার বিষয়ে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইউজিসির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম জানান, আমরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে করোনার সংক্রমণ বাড়লে মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে সব ক’টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেবো।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ২০২০ এবং ২১ সালে সরকারের নির্দেশনায় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার পর এখন বেশির ভাগ শিক্ষকই প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করেছেন। প্রথম দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যেও প্রযুক্তিগত নানা বিষয়ে দুর্বলতা ছিল। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই প্রযুক্তি ও অনলাইনকেন্দ্রিক শিক্ষার সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারছেন। তবে এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে এখনো গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্ট ফোন বা ডিভাইস নেই। আবার ইন্টারনেট কানেকশন বা ডেটার উচ্চ মূল্যের কারণেও সব শিক্ষার্থী এই সুযোগ কাছে লাগাতে পারবেন না।