রাতে হয়তো ডোমিনিকার হোটেল বেডে মহাসমুদ্রের দুলুনি টের পেয়েছেন অনেক ক্রিকেটারই! দুঃস্বপ্নের ফেরিযাত্রা ভুলে আজ মাঠের ক্রিকেটে মনোনিবেশ করার সময় এসেছে। মনের কোণে ক্ষোভ বা রাগ যেটাই থাকুক। মাঠের ক্রিকেটে ফোকাস করতে হবে। পাঠক ইতোমধ্যে জেনে থাকবেন সেন্ট লুসিয়া থেকে ডোমিনিকা যাত্রাকালে অসুস্থ হয়ে যান বাংলাদেশের কয়েক ক্রিকেটার। অবশ্য এ রিপোর্ট লেখার সময় তারা অনুশীলন শুরু করেছেন। ‘সি সিকনেস’ বা সমুদ্রপীড়া ভুলে জেতার প্রত্যয় রয়েছে তাদের।
দুঃসহ টেস্ট স্মৃতি পেছনে ফেলে কেবল জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তিন ম্যাচ সিরিজে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটায় শুরু হবে ম্যাচটি। আর এ খেলাটি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস।
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কাল কথা বলেছেন। সেখানে তিনি আত্মবিশ্বাসের কথা জানান। অবশ্য ফেরিতে ঘটে যাওয়া নিয়ে অল্প কথা হয়েছে। তিনি জানান, সবার পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। খেলতে মরিয়া সবাই। ক্রিকেট নিয়েই মূল কথা হয়েছে। ২০০৯ সালে এ মাঠে বাংলাদেশ ২টি ওয়ানডেতে জিতেছিল। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ সে দলে ছিলেন। সে বিষয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘আমি আর সাকিব আসার পথে গল্প করেছি। সেটা অনেক আগের কথা। পিচ অন্যরকম হতে পারে। আর এটা ভালো ফিলিং দেয়। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে।
আটলান্টিক মহাসাগরের ছন্দ সব সময় সুখকর নয়। বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরনের টাইটানিক চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যপট নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অন্য এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে বৃহস্পতিবার। সমুদ্র মানুষকে দুহাত দিয়ে কাছে টানে। এর পর তার নির্মমতা দিয়ে শেষ করে দেয়! এসব সিনেমার ডায়ালগের মতো মনে হলেও শরিফুল-মিরাজ-সোহান-নাসুমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেক হয়ে ডোমিনিকা যেতে হবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার ভ্রমণ। সমুদ্র পার হতে হবে ফেরি দিয়ে। শুরুতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বেশ উপভোগ করছিলেন উত্তাল সমুদ্র। সেলফি তুলেছেন সাকিব, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও অন্যরা। ঘোর কেটে ওঠার পর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আর উপভোগ্য ছিল না। ক্রিকেটাররা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করেন অনেকে। আর ফেরিতে লুটিয়ে পড়েন। নিমিষেই আনন্দভ্রমণ বিলিন হয়ে আহাজারি শুরু হয়।
যত সময় গড়াতে থাকে, ততই ঢেউ আর ফেরির দুলোনিতে মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম, উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান, টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ম্যানেজার নাফিস ইকবাল এবং সাপোর্ট স্টাফের এক সদস্য ‘মোশন সিকনেসে’ আক্রান্ত হন। একমাত্র বিচলিত হননি সাকিব আল হাসান। অবশ্য রিয়াদও ক্যারিবীয় টি টোয়েন্টি লিগও খেলেছেন। তাদের অভ্যাস থাকলেও বাকিরা বেশ আতঙ্কিত হয়ে যান।
যাত্রার মাঝপথে বিরতি দিলেও বিমানের টিকিটজোগাড় করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাকি পথও ফেরিতেই পাড়ি দিতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। মাঝপথে ক্রিকেটাররা যেতে চাননি ফেরিতে করে। অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের এ যাত্রা করতে হয়েছে। ক্রিকেটাররা মোটেও সন্তুষ্ট নন এ সফরে।
দুই টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ঘুরে দঁরড়ানোর জন্য এটাই বাংলাদেশ দলের সেরা সময়। যদিও সবকিছু টাইগার দলের পক্ষে নেই। সংক্ষিপ্ত এ ভার্সনে নিজেদের সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। একমাত্র জয়টি এসেছে নিজ মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তার আগে পাকিস্তান সফরে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে টাইগাররা। তার আগে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের পাঁচ ম্যাচের সব কটিতেই পরাজিত হয়েছে টাইগাররা।
তার পরও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠেয় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সঠিক কম্বিনেশনের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ এই ভার্সনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের রেকর্ডের কারণে আশাবাদী হতে পারে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরও টি-টোয়েন্টিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য তিন ম্যাচের সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাস্ট্রের মাটিতে। তা ছাড়া দুইবারের বিশ^চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়-পরাজয়ের রেকর্ড অনুযায়ী আশাবাদী হতেই পারে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় পেয়েছে পাঁচটিতে, পরাজিত হয়েছে সাতটিতে এবং একটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত।
এ ছাড়া সংক্ষিপ্ত এ ভার্সনে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মোট ১২৫টি ম্যাচ খেলে ৪৪টিতে জয় পেয়েছে। পরাজিত হয়েছে ৭৯টিতে। বাকি দুই ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত।