সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ৬ দফা জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চলাচল ও সার্বিক কার্যাবলীর ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা জারি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে ১৪ জুন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় নেয়া সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধকল্পে নিচের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এই ৬ নির্দেশনা হলো—
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে।
২. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।
৩. ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানসমূহে (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৫. দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
৬. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন।
এদিকে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৪৫ জনে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৮৭ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬১ জনে। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রামের এবং একজন ঢাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে দুজন নারী, একজন পুরুষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২০০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ৬৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৮৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ৪৮৯টি। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এদিকে করোনা বাড়তে থাকায় সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা থেকেও বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন।
এ ছাড়াও দেশে হঠাৎ করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর।
গত ২৩ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) রূপক রায়ের সই করা নির্দেশনা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন অফিস/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরিধান করে অফিস/শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।