হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি ব্যক্তি ছিলেন ডাকাত দলের সরদার। গণপিটুনিতে দুই হাত হারালে ঘটনাক্রমে হয়ে যান হাজি। শুরু করেন হজের নামে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি। হজে সবাই টাকা খরচ করে গেলেও উনি হজে খরচ নয়, উল্টো আয় করতেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিবার হজ থেকে ফিরে কিনতেন জমি। বসতভিটার অবস্থা ভালো না হলেও কৃষি জমি রয়েছে ২০ বিঘা।
হজের নামে সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এই ব্যক্তি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মতিয়ার রহমান। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা তিনি। যাকে গ্রামের সবাই ‘মন্টু ডাকাত’ নামেই চিনেন।
তিনি পেশায় ডাকাত সর্দার। ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনির সময় ভেঙে যায় দুই হাতের আঙুল। এক সময় দুই হাতের কবজি কেটে বাদ দিতে হয় তার। এরপর ডাকাতি পেশা বদলে বনে যান ভিক্ষুক।
কেবল ভিক্ষুক বললেও তাকে কম হবে, কেননা তিনি আন্তর্জাতিক মানের ভিক্ষুক। দেশে নয়, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এমনকি সৌদি আরবও বাদ যায়নি তার ভিক্ষাবৃত্তির মানচিত্র থেকে।
এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গাটিও ঠিকঠাক চিনে গিয়েছিলেন তিনি। প্রতি বছর হজের মৌসুমে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। গত ১৫ বছরের আয় করা কোটি টাকায় আজ ২০ বিঘা কৃষি জমির মালিক ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি।
সম্প্রতি সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এবার ভিক্ষা করার অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন।
জানা যায়, এ পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ বার হজে গেছেন মতিয়ার। প্রতি বছর ভিক্ষা করে দেশে ফিরে একের পর এক কিনে চলেছেন জমি। এ পর্যন্ত ২০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। করোনার সময় বন্ধ থাকলেও এবার তিনি ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস এজেন্সির মাধ্যমে হজে যান।
কিন্তু বুধবার (২২ জুন) বিকেল ৫টার দিকে মদিনা শরীফে ভিক্ষা করার সময় তাকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। ঘটনা জানার পর বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী থানায় মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের সই করা কারণ দর্শানোর নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার (২৬ জুন) হজ সম্পর্কিত ওয়েব সাইটে এক নোটিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ভিসার শর্ত ভঙ্গের কারণে মতিয়ার রহমান গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় হজযাত্রীকে সৌদিতে পাঠানো ধানসিঁড়ি ট্রাভেলস এয়ার সার্ভিস নামে হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই যাত্রী ‘সৌদি আরবে ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে’ বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ভিক্ষা করছিলেন। এতে সৌদিতে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পরে তদন্তে জানা যায়, ধানসিঁড়ির সেই হজযাত্রীকে গাইড করার মতো সৌদিতে কোনো মোনাজ্জেম এবং তার বসবাসের বাড়ি কিংবা হোটেলও ছিল না। এ ধরনের কাজের জন্য হজ এজেন্সিটির বিরুদ্ধে কেনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না; তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
স্থানীয়রা জানান, মতিয়ার রহমান ডাকাতিতে ধরা পড়ে দুই হাতের কবজি হারানোর পর ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন। তিনি গ্রামে ভিক্ষা করতে না। প্রতি বছর হজ মৌসুমে সৌদি চলে যেতেন তিনি। হজের মৌসুম শেষ হলে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ধরা না পড়লে কেউ জানতো না যে তিনি বিদেশে ভিক্ষা করেন।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন যে হজের অজুহাতে মতিয়ার প্রতি বছর সৌদি গিয়ে ভিক্ষা করেন। যা দিয়ে তিনি কয়েক বিঘা জমিও কিনেছেন ইতোমধ্যে। প্রতারণা করে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।
মেহেরপুর জেলা হাজি সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল এ ঘটনাকে বাংলাদেশি হাজিদের জন্য লজ্জার বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি হাজি সমিতি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।
আর গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন, ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। মতিয়ার দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।