আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা

Slider জাতীয়

সব বাধা জয় করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। নিজ অর্থে বিশাল এ সেতু বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বপ্নিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণের বাকি আর মাত্র ১২ ঘণ্টা। শনিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর। যার মধ্য দিয়ে অবসান হবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার। উন্মোচন হবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

এদিকে সেতুটির জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পদ্মাপাড় সেজেছে নতুন রূপে। যার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে।

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে নেওয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এবং আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। সভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি গোয়েন্দা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। দিন গড়িয়ে বিকেল হতে জনসভাস্থল ও আশপাশে বাড়তে থাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি।

অন্যদিকে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজও শেষ হয়েছে। মঞ্চ সাজানো হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে। মঞ্চের সামনে কাঠ দিয়ে স্প্যান ও পিলার তৈরি করা হয়েছে। নদী অঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে মঞ্চের সামনে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে একটি বড় ও ১০টি ছোট নৌকা শোভা পাচ্ছে। বড় নৌকায় লেখা আছে, ‘আমরা পারি’। ছোট নৌকাগুলোর কোনোটিতে লেখা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। আবার কোনোটিতে বঙ্গবন্ধু কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ছবি। কোনো নৌকায় রয়েছে বাংলাদেশের পতাকা আঁকা।

প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সময়সূচি

মাওয়া পয়েন্টে সকাল ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন। এর আগে তিনি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাওয়া পয়েন্টে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। সকাল ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন। তিনি সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন তিনি।

দুপুর ১২টায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *