মুন্সীগঞ্জ: পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তের চার ইউনিয়নের নিরাপত্তায় কাজ করবে সেতুর দুই প্রান্তে নির্মিত দুই থানা। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও পদ্মা সেতু উত্তর থানা ভবন। মঙ্গলবার (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে থানা দুটির উদ্বোধন করেন।
২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে সেতু দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই যানবাহন চলাচল করবে। উভয় থানা মূলত সেতুর নিরাপত্তা এবং এর সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষের আইনি সহায়তার জন্য কাজ করবে। এ ছাড়া সেতুতে কারা যাতায়াত করছে সে বিষয়টিও সার্বক্ষণিক মনিটর করা হবে।
বুধবার থেকে এই দুই থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ বা মামলা হয়নি। দুই থানায় একজন করে ওসি (ইন্সপেক্টর), দুজন করে এসআই, দুজন করে এএসআই ও ২০ জন কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার আওতায় থাকবে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমণ্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন। থানা চালুর খবরে স্থানীয়রা খুশি।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘২১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা উত্তর থানার উদ্বোধনের পরই আমাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। সেতু উদ্বোধনের পর এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় কোনও যাত্রী সমস্যার সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিক আইনি সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সেতুতে কারা যাতায়াত করছে সে বিষয়টিও সার্বক্ষণিক মনিটর করা হবে। গত দুদিনে থানায় কোনও অভিযোগ আসেনি।’
পদ্মা নদীর উভয় প্রান্ত একসময় বলতে গেলে জনশূন্য ছিল। এখন পদ্মা সেতুকে ঘিরে দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে। নতুন নতুন জনবসতি তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন হাট-বাজার বসছে। মানুষজন এখানে বসবাস করতে শুরু করছেন। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের প্রশাসনিক কার্যক্রম দরকার ছিল। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদিনীমণ্ডলে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার অদূরে এই থানা ভবন দেখে খুশি এলাকার মানুষ।
মেদিনীমণ্ডল এলাকার শেফালী বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন থানা ভবন দেখে আমরা খুশি। কারণ, এখন এখানে মানুষ বেড়েছে। থানা হলে সবার অনেক ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।’
একই এলাকার সবুজ শেখ বলেন, ‘এই পথে এখন লোকজন বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানাটি খুব দরকার ছিল।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুর দুপাশে দুই থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সেতু সংশ্লিষ্ট যেকোনও ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম ঠেকাতে থানা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন থানাগুলোর যেমন পরিকল্পনা রয়েছে সে অনুযায়ী জনগণকে সেবা দেওয়াসহ সব সুযোগ-সুবিধা রেখেই এই দুই থানা নির্মাণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা কাজে থাকবে অত্যাধুনিক যানবাহন, আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম। এ ছাড়া সেতুতে নির্বিঘ্ন যানবাহন চলাচল এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা জোরদারে পদ্মা সেতু উত্তর এবং দক্ষিণ দুই পাশই থানার অধীন থাকবে। এক একর করে জমিসহ থানা ভবন দুটি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিভাগকে হস্তান্তর করে ২০১৯ সালের মে মাসে।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৫ জন জনবল নিয়ে থানার কার্যক্রম চলছে।