মিয়ানমারের সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচার এখন থেকে কারাগারেই হবে। সব ধরনের আইনি কার্যক্রম আদালত কক্ষ থেকে কারাগারে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সেনা সরকার। সু চির মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার (২২ জুন) এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। বন্দি করা হয় ৭৭ বছর বয়সী সু চি-কে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ আনা হয়।
এর মধ্যে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি করে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে ইতোমধ্যে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের কমপক্ষে ২০টি মামলা এখনো বিচারাধীন। তবে তিনি সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
খবরে বলা হয়েছে, সু চি-কে রাজধানী নেপিদোর একটি অজ্ঞাত স্থানে বন্দি রাখার অনুমোদন দিয়েছেন সেনা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। স্থানীয় একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, নেপিদোর কারাগারের নতুন একটি বিশেষ আদালতে মামলাগুলোর শুনানি স্থানান্তর করা হবে। সূত্রটি আরও বলেছে, আদালত বসানোর জন্য নতুন একটি ভবন প্রস্তুত হয়েছে বলে বিচারক ঘোষণা দেন।
মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিক ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সু চির দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া এতদিন রুদ্ধদ্বার আদালতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে শুধু সীমিত তথ্য দেয়া হয়ে থাকে। এ নিয়ে বাইরে কথা বলার বিষয়েও সু চির আইনজীবীর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ছাড়া শুধু আদালত চলাকালে তিনি সু চির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
সু চির দণ্ডকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে সামরিক বাহিনী বলছে, একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে তাকে প্রাপ্য আইনি সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
সু চির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোতে সব মিলিয়ে ১০০ বছরেরও বেশি সাজার সুযোগ রয়েছে। সু চির সমর্থকদের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং এর উদ্দেশ্য তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা ও সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়া।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে। নিজেদের ক্ষমতা পোক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে সেনা সরকার। তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি দেশজুড়ে চলছে সেনা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
তবে শুরু থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে জান্তা সরকার। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৩০০ বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ মনে করছে, এখন সশস্ত্র সংগ্রামও দরকার। সেই লক্ষ্যে কারেন প্রদেশের জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা।