পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: হামলা-নাশকতার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবুও প্রস্তুত র‌্যাব

Slider জাতীয়

বহুল আলোচিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৫ জুন। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ সেতুর উদ্বোধন ঘিরে কেউ যাতে নাশকতামূলক কোনো কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেজন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বুধবার (২২ জুন) সেতুর দুই প্রান্তে র‍্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন এবং শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পরিদর্শন শেষে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

এসময় তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় সেতুর দুই প্রান্তেই র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্সে কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে র‌্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার।

মাদারীপুরের শিবচর কাঁঠালবাড়ি ভিআইপি স্পিডবোট ঘাটে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হামলা বা নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বাড়ানোর মাধ্যমে জঙ্গিদের যে কোন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের এ আকাঙ্খা পূরণে আজ পদ্মাসেতু দৃশ্যমান এবং উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুর ওপর দিয়ে সবার নির্বিঘ্ন চলাচলসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ফোর্সেসসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সজাগ রয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি/বিদেশি অতিথিরা, সরকারের মন্ত্রী, এমপি, সামরিক/বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চয়নের লক্ষ্যে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর পর সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখতে র‌্যাব সর্বদা সচেষ্ট ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে র‌্যাব ডিজি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ সামগ্রী চুরির সঙ্গে জড়িত দুটি চক্রের ১০ জনকে বিপুল পরিমাণ চুরি করা নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য সামগ্রীসহ ২০১৯ সালে মুন্সিগঞ্জ থেকে আটক করেছিল র‌্যাব। নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্মাণ কার্যক্রম চলমান থাকায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে।

বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, সব ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া-১ ও সার্ভিস এরিয়া-২ সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং সেতুর নিরাপত্তা জোরদার করতে দুই প্রান্তেই পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

সমাবেশস্থল, টোল প্লাজা, ফলক উন্মোচন ও হেলিপ্যাড এলাকার নিরাপত্তার লক্ষ্যে র‌্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল মোতায়েন থাকবে। অনুষ্ঠান চলাকালীন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, Outer Perimeter পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, ফুট পেট্রোল, বোট পেট্রোলিং, অবজার্ভেশন পোস্ট, চেক পোস্ট এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

সেতুর দুই প্রান্ত, সমাবেশস্থলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে র‌্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং সম্পন্ন করা হবে। র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট যে কোনো উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকবে।

যে কোনো ধরনের নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় সেতুর দুই প্রান্তেই র‌্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি যে কোন পরিস্থিতিতে র‌্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।

যেকোন প্রয়োজনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সেতুর দুই প্রান্তেই র‌্যাবের মেডিকেল টিম নিয়োজিত থাকবে। সেতুর দুই প্রান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাটালিয়নগুলো নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে। র‌্যাব সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুম (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নাম্বার: ০১৭৭৭৭২০০২৯) ও অনুষ্ঠান স্থলে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের (অনুষ্ঠান স্থালের কন্ট্রোল রুম নাম্বার: ০১৭৭৭৭২০০৪৯) এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে।

তিনি বলেন, নাশকতাসহ যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে নাশকতাসহ যেকোন ধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতি কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

দুই প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রবেশ স্থান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে র‌্যাবের চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে আগত যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হবে।

ভার্চুয়াল জগতে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যেকোন ধরনের গুজব, উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে র‌্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। র‌্যাব সদর দপ্তর সার্বিক কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *