চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার প্রভাব শুধু সিলেট বিভাগেই নয় বরং অন্যান্য জেলাতেও পানি বেড়ে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ। তাই ধারণা করা হচ্ছে বন্যার পানি কমে গেলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগবে। ফলে প্রস্তুতি থাকলেও স্থগিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এসএসসির আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এ দিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি সাপেক্ষে স্থগিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষা ঈদের আগেই নেয়া যায় কি না সে বিষয়ে একটি সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। কিন্তু গত দু’দিনের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায় দেখা গেছে সিলেটের কিছু এলাকায় বন্যার পানি কমলেও দেশের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে বন্যার পানি বাড়ছে বিধায় এই বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ারও একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দুটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা ৩৫ লাখের মতো পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে গত দুই বছর যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। ফলে কলেজের শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে দেরিতে। চলতি বছর থেকেই সরকারের প্রচেষ্টা ছিল এই পাবলিক পরীক্ষা দুটি ধাপে ধাপে এগিয়ে এনে পিছিয়ে পড়া থেকে মূল শিক্ষাবর্ষে ফিরে আসা। কিন্তু উদ্যোগের প্রথম বছরেই এবার বন্যায় আরো একবার ধাক্কা পিছাল শিক্ষাপঞ্জি। এতে ঈদের আগে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করার সম্ভাবনা এখন আরো ক্ষীণ হয়ে আসছে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রগুলো বলছে স্থগিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষা ঈদের আগে শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকলেও সেই সম্ভাবনাও এখন কম। কেননা একবার কোনো পরীক্ষা স্থগিত বা বাতিল করা হলে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতেও ভাটা পড়ে। কাজেই নতুন করে পরীক্ষার রুটিন দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হলেও সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিয়েই রুটিন প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে ঈদের আগে রুটিন দিলেও পরীক্ষা ঈদের আগে শুরু করা সম্ভব হবে না।
অন্য দিকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগবে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। যদিও আগের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী আগস্ট মাসে ২২ তারিখ এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এখন সেই তারিখও ঠিক রাখা যাবে না।
অবশ্য দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়ও বাড়িয়েছে ঢাকা বোর্ড। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত অনলাইনে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হলেও সময় বাড়ানো হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা যাবে। আর ৭ জুলাই পর্যন্ত ফরম পূরণের ফি জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়েছে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় পুনঃনির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
অপরদিকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা আগামী ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন সেখানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা স্থগিতের পর স্বাভাবিকভাবেই এইচএসসি পরীক্ষাও এখন আর আগের নির্ধারিত সময়ে আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই । ফলে সঙ্গত কারণেই এইচএসসি পরীক্ষাও পেছাতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঈদের ছুটি শেষে নতুন রুটিনে ১০-১৫ দিন পিছিয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হতে পারে। আর মাধ্যমিক স্তরের এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই মাসের মধ্যেই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসএসসি-সমমান পরীক্ষার জন্য নতুন রুটিন দেয়া হবে। আগের রুটিনের আলোকেই নতুন পরীক্ষার রুটিন তৈরি করা হবে, এ ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষা শুরুর সময়টা পরিবর্তন হবে। পরীক্ষার্থীদের নতুনভাবে প্রস্তুতির জন্য ৭ থেকে ১৫ দিন সময় দেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে আমরা ঈদের আগে কয়েকটি পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করছি। বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়ায় তা সম্ভব হবে কি না, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের প্রস্তুতি থাকলেও বন্যা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে, কবে শুরু হবে পরীক্ষা।
এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, একটি পরীক্ষার সঙ্গে আরেকটি সম্পৃক্ত। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় এইচএসসিও পিছিয়ে যাবে। সে কারণে আগামী বছরের এ দুই পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে নেয়া সম্ভব হবে না।
জানা গেছে, চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। সাধারণ ৯টি বোর্ডের অধীনে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর বাইরে দাখিলে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬২ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে।