সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার প্রধান কারণ বৃষ্টি। মেঘালয়তে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে। আজ শনিবার সারা দিন সিলেট শহরেও বৃষ্টি হয়েছে। তবে আগে থেকেই নদীর পানি অনেক উঁচুতে ছিল। বর্তমানে টানা বর্ষণের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হবে এটা তো স্বাভাবিক। এই বৃষ্টি এবার সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।
আষাঢ়-শ্রাবণে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যর জন্যই বন্যা হয়। বেশি বৃষ্টি হয়ে বন্যা হতেই পারে। তবে এটি জেনেও যদি কোনো প্রস্তুতি বা ব্যবস্থাপনা না থাকে, তাহলে বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সবেচেয়ে বড় বিষয়, সিলেট-সুনামগঞ্জ শহরে বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী কোনো বাঁধ নেই। ফলে সেখানে নদী উপচে পানি উঠছে, বন্যা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও হবে। এর জন্য প্রস্ততি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তবে বর্তমান বন্যার্তদের পাশে দাড়াতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এমন বন্যার ঘটনা প্রতি ৪ থেকে ৫ বছর পর বারবার হয়। ফের ৪ থেকে ৫ বছর পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে। অর্থাৎ প্রকৃতি কীভাবে আচরণ করবে এটি ভালোভাবে বুঝে নিয়ে তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বছরের যে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে, এর পানি নামানোর কোনো উপায় নেই। ফলে এ বছর বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ত্রাণ কার্যক্রম বাড়াতে হবে, দ্রুত পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয় প্রকল্পে সরিয়ে নিতে হবে।
২০০৪ সালে কোনো একটি কাজের জন্য সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজে ছিলাম। সেখানে তিন দিন ছিলাম, তবে পাঁচ দিন থাকার কথা ছিল। একপর্যায় টের পেলাম ঢাকা-সুনামগঞ্জ রাস্তাটা ডুবে যাবে। সে সময় তাৎক্ষণিক গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম। কারণ ওই সড়কটি পানিতে ডুবে গেলে তা পরিষ্কার করতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগবে। যখন গাড়ি নিয়ে রওনা দেই, ওই সময় রাস্তার ওপর গোড়ালি সমান পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট শহর পার হওয়ার পর সুনামগঞ্জের অন্য কলিগরা ফোন দিয়ে বলেন, ‘স্যার আপনি তো কোনো রকম পার হয়েছেন, এখন ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ এত পরমাণ পানি বেড়েছে।’
মোট কথা, এসব নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে।
আইনুন নিশাত : পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক
অনুলিখন : আব্দুল্লাহ মামুন