সিলেট: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানেই স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলা। সমানতালে পানি বাড়তে থাকায় অজানা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে লোকজনের।
জানা গেছে, সিলেট নগরসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত বন্যা ২০০৪ সালের বন্যাকে অতিক্রম করেছিল। এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। অবস্থা এতই বেগতিক যে মানুষ এখন আশ্রয়ও পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে সুরমা-কুশিয়ারার পানি ক্রমাগত বাড়ছে। এতে বেশি প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। বানের জলে ভেসে যাচ্ছে কাঁচা ও টিনশেড বাড়িঘর। অনেক জায়গায় নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তাও পোঁছানো সম্ভব হচ্ছে না মানুষের কাছে।
ওসমানী বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ বলেন, বন্যার পানি বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। বিমানবন্দরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বন্যার পানি থেকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
হাফিজ আহমদ আরো বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার ও বিদ্যুৎ পাওয়ার স্টেশন রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার সকাল থেকে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারা বাজার, দিরাই, জামালগঞ্জ উপজেলাসহ মোট আটটি উপজেলায় কাজ করছে সেনাবাহিনী।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন সিলেটের প্রধান মেজর জেনারেল হামিদুল হক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর আটটি ব্যাটালিয়ান সদস্যরা পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো, চিকিৎসা সহায়তা, খাবারের ব্যবস্থা, খাদ্য গুদাম রক্ষাসহ সিলেট সদরের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ পাওয়ার স্টেশন রক্ষায় কাজ করছে।
দুই জেলায় বিদ্যুৎহীন পৌনে ২ লাখ গ্রাহক
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে অবনতি হচ্ছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় পৌনে ২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পানি বাড়তে থাকায় সিলেট সদরের কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ছুঁই ছুঁই করছে বন্যার পানি।
বিউবো সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির শুক্রবার বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে পুরো সিলেট জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, বাসা-বাড়ির মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নগরের উপশহর এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা বিদ্যুতের সাবস্টেশনে পানি ঢুকে পরায় পুরো দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সিলেটের চার জেলায় পিডিবি’র সাড়ে চার লাখ গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে সিলেটের এক লাখ ও সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎহীন আছেন।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২-এর জেনারেল ম্যানেজার দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী ও সঞ্জীব কুমার রায় জানিয়েছেন, সমিতির সিলেট-১-এর অধীন ৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক এবং সিলেট-২-এর অধীন ২ লাখ ১২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে অন্তত ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন আছেন।
বিউবোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, বন্যার অবনতি হওয়ায় অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।