শ্রীলংকার অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকট সাম্প্রতিক বিশ্বে এখন ‘উদাহরণ’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই উদাহরণ টেনেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তান এখন শ্রীলংকার পথে যাচ্ছে। গত বুধবার রাওয়ালপিন্ডিতে দলীয় সভায় এ কথা বলেন তিনি। খবর ডনের।
ইমরান এমন সময় শ্রীলংকার নাম নিলেন যখন পাকিস্তানি রুপির দাম পড়ছে তো পড়ছেই। গতকাল আরও এক দফা রুপির দরপতন হয়েছে। একই দিনে সরকার জ্বালানি তেলের দামও আরেক দফা বাড়িয়েছে। যদিও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জ¦ালানি মূল্যবৃদ্ধির দায় সাবেক সরকারের কাঁধে দিয়েছেন। শাহবাজ বলেছেন, সরকার নিরুপায়, পূর্বের সরকার যা করে গেছে এ কারণে এই সরকার জ্বালানির মূল্য বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
খবরে বলা হয়েছে- পাকিস্তানে এখন প্রতিলিটার পেট্রল ২৩৪, ডিজেল ২৬৩ আর কেরোসিন ২১২ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানি রুপির দরে একের পর এক পতন ঘটেছে। একই দিনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানি ২০৭ রুপির বিনিময়ে মিলছে ১ ডলার। ১৯৪৭ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানি রুপির এমন পতন কখনই দেখেনি।
এমন প্রেক্ষাপটে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানে রপ্তানি আজ ১০ শতাংশ কমে গেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বেরিয়ে গেছে ৭০০ বিলিয়ন রুপি। পাকিস্তানের অর্থনীতি সম্পর্কে রেটিংও কমিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান মুডিস। ইমরান বলেন, দেশ শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতির পথে রয়েছে। এই দেশকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় আগাম ও স্বচ্ছ নির্বাচন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিদেশি ঋণের চাপ পড়ছে সাধারণ জনগণের ওপর। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে জ¦ালানি তেলের দাম আবারও বাড়ানো হলো। অন্যদিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও কমতে শুরু করেছে।
বর্তমান এই অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইমরান খান সরকারের নীতিকে দায়ী করেছে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেছেন, ইমরান খান সরকারের নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির এই বেহাল দশা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভর্তুকি দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পেট্রলের দাম কমিয়েছিলেন এখন বর্তমান সরকারকে সেই সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে। তার মতে, পাকিস্তান প্রতিলিটারে পেট্রলে ২৪ দশমিক ০৩ রুপি, ডিজেলে ৫৯ দশমিক ১৬ রুপি, কেরোসিনে ৩৯ দশমিক ৪৯ রুপি এবং লাইট ডিজেলে ৩৯ দশমিক ১৬ রুপি ভর্তুকি দিচ্ছে। এদিকে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির নজিরবিহীন দরপতন ঘটেছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে গতকাল বৃহস্পতিবার আরেক দফা নেমেছে পাকিস্তানি রুপির মান। বর্তমানে পাকিস্তানের মুদ্রাবাজারে ২০৭ রুপির বিনিময়ে মিলছে ১ ডলার। খোলাবাজারে এটি দাঁড়িয়েছে ২০৮ রুপি।