সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড় গড়ে উঠেছে। গত ১২ মাসে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশিদের ৩ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক-এসএনবির ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০২১’ বার্ষিক প্রতিবেদন এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকে বর্তমানে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ৮ হাজার ২৭৫ কোটি। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
দেশ থেকে বিভিন্ন সময় পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার যখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে, ঠিক তখনই খোঁজ মিলল সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের এই পাহাড়সমান টাকার। এরমধ্যে গত ১২ মাসে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকটিতে বাংলাদেশিদের টাকা জমা করার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। যা ১৯৯৬ সালের পর সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশি ৯৫ দশমিক ৭০ টাকা হিসেবে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি। ২০২০ সালে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০১৯ সালে ৬০ কোটি ৩০ লাখ, ২০১৮ সালে ৬২ কোটি ও ২০১৭ সালে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১৯৯৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের মাত্র ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জমা ছিল। ২০০২ সালে তা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্রাঁ। বিপরীতে গত দুই দশকে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার দশ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর। নয় কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়। নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও গত এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক।
বাংলাদেশের মত প্রতিবেশী ভারতীয়দের নামেও সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ ব্যাপক বেড়ে ৩৮৩ কোটি ফ্রাঙ্ক হয়েছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৫৫ কোটি ফ্রাঙ্ক। পাকিস্তানের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণও বেড়ে ৭১ কোটি ফ্রাঙ্ক হয়েছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৪ কোটি ২২ লাখ ফ্রাঁ।
অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার সুইস ব্যাংকে রাখার অর্থের পরিমাণ কমে ৫ কোটি ৬০ লাখ ফ্রাঙ্ক হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাঙ্ক।
বিশ্বজুড়ে তালিকার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে সুইস ব্যাংকগুলোতে যুক্তরাজ্যের জমা রাখা অর্থের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি ৩৭৯ বিলিয়ন ফ্রাঁ। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। তাদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ১৬৮ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক। সুইস ব্যাংকে রাখা ১০০ বিলিয়নের উপরে অর্থ রয়েছে শুধু এ দুই দেশের নাগরিকদের নামেই।
বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না। এমনকি সুইস ব্যাংক অর্থের উৎসও গোপন রাখে।