সিলেট: টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। এরই মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ। অব্যাহত আছে ভারি বর্ষণ ও ঝড়।
একমাস আগে টানা দশদিনের বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠা জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষের এবার সর্বস্ব হারানোর জোগাড়। পরিবার পরিজন আর গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন বিপুল মানুষ। কিন্তু অব্যাহত বৃষ্টিতে পানি বাড়তে থাকায় অনেক আশ্রয়কেনেন্দ্রেও ঢুকছে পানি। অনেকে নৌকার অভাবে আসতে পারছেন না আশ্রয়কেন্দ্রে। ঘটছে নৌকাডুবির ঘটনাও।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় আগামী ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে জেলার অন্তত তিন উপজেলার পরীক্ষার্থী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার এবং সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর বাইরে জেলার ছোট ছোট অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে।
সিলেট নগরের ৮ থেকে ১০টি এলাকা ছাড়াও জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম এরই মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।
একমাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ফের বন্যাকবলিত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো মানুষ। নগর ও পাঁচটি উপজেলায় অন্তত চার থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ জানান, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, সেগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার জরুরি সভায় বসে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। সেখানে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। সবার কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজ চলছে। তবে করোনার কারণে বারবার পেছানো এসসসি পরীক্ষা আবার পেছানো হবে কিনা তা এখনই বলতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে তিনি জানান, পরীক্ষা পেছানো বা বাতিল করার সুযোগ কম। তারপরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।