ডিএনসিসি নির্বাচন মাহীর হৃদয় ভেঙে ফুরফুরে তাবিথ

ঢাকা রাজনীতি

Mahi_sm_989657533
ঢাকা: একজন ২০ দলের সমর্থন নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে প্রচারণা শুরু করেছেন। অন্যজন ভাঙা হৃদয় নিয়ে বিষণ্ণ, প্রচারণা-গণসংযোগ থেকে গুটিয়ে রেখেছেন নিজেকে।

বলা হচ্ছে, যথাক্রমে তাবিথ আউয়াল ও মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কথা। যার যার পিতার কর্মফলই যেন ভোগ ও উপভোগ করছেন ঢাকা সিটি নির্বাচনে (উত্তর) বিএনপি’র ঘ্রাণপুষ্ট এ দুই মেয়রপ্রার্থী।

এসব হৃদয়বিদারক বিশ্লেষণ আসছে সিটি নির্বাচনের ঘটনাক্রম পর্যবেক্ষণকারী মহল থেকে। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) পর্যন্ত নির্বাচনী-হালচাল প্রত্যক্ষ করে তারা এসব বলছেন।

এ দুই প্রার্থীর পিতৃপরিচয় সবার জানা। সত্যিকার অর্থে পিতার পরিচয়ই তাদের জন্য এখনো মূখ্য। কারণ, রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজস্ব পরিচয় সেভাবে তৈরি করতে পারেননি তারা। তাই ‘পিতার সৌভাগ্য ও দূর্ভাগ্যের শিকার ও আশীর্বাদপুষ্ট’ বলে গণ্য হচ্ছেন এ দুই তরুণ।

মাহী অবশ্য নিজের পরিচ্ছন্ন ইমেজে কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। কিন্তু তাবিথের নামও অনেকের অজানা ছিল কয়েকদিন আগ পর্যন্ত।

সেই তাবিথই এখন ২০ দলের সমর্থন পেয়ে দেশের বড় ও সুপরিচিত দল বিএনপি’র প্রতিনিধিত্ব করছেন গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত এ নির্বাচনে।

তাবিথ ২০ দলীয় জোটনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। অন্যদিকে, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতাকালীন মহাসচিব, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী।

আলোচনার স্বার্থে একটু পেছনের দিকে যেতে হয়।

বিএনপি’র প্রতিষ্ঠালগ্নের নেতা হয়েও একসময় দল থেকে বের হন বা বের হতে বাধ্য হন বদরুদ্দোজা। নতুন দল গড়েন, ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’।

এরপর বিএনপি নানা ঘটনায় ২০ দলের জোট করে, কিন্তু বিকল্পধারা নিয়ে জোটে যোগ দিতে রাজি হননি বদরুদ্দোজা। উল্টো জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখান পিতা-পুত্র।

২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সেসব ভোলেননি। তাই সিনিয়র ও জুনিয়র বদরুদ্দোজাকে ক্ষমা করতে রাজি নন তারা। দুঃসময়ে পাশে না থাকা এ ব্যক্তিদের জোটের আপন ভাবতে পারছেন না কিছুতেই।

শুধু তা নয়, সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা, সুবিধাবাদীতাসহ নানা অভিযোগ করছেন তারা পিতা-পুত্রের প্রতি।

এসবই মাহীর বর্তমান অবস্থার কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

শুক্রবার প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। ‘বাস’ প্রতীক নিয়ে ফুরফুরে মনে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন তাবিথ। অন্যদিকে, বিষণ্ণতা কাটছে না মাহীর।

এদিন দুপুরে জুম্মার নামাজের আগেই কারওয়ান বাজারে উপস্থিত হন আউয়ালপুত্র।

দুই ভাইকে নিয়ে নামাজ শুরুর আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

তাবিথ বলেন, প্রচারণায় দেরি করেছি বলে ক্ষতিতে পড়বো মনে করছি না। আমি ২০ দলের সমর্থনের আশায় ছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী সব করছি। একবারে প্রতীক নিয়েই প্রচারণায় নামতে পেরেছি।

বারবার নিজেকে ২০ দলের প্রার্থী হিসেবে এবং সাধারণ মানুষেরও প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করছিলেন বক্তব্যে।

সকালে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে তাবিথ বলেন, সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাইবো আমি। জয়ের বিষয়েও প্রত্যাশী। সবাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।

কারওয়ান বাজারের আম্বরশাহ মসজিদে জুম্মার নামাজের পর মাজার জিয়ারত করেন তিনি। মুসল্লিদের সঙ্গে সংযোগ শেষে বাজারে বের হন।

বাস প্রতীক দেখিয়ে ঘুরে ঘুরে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে দোয়া (ভোট) চান, আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেন সাধারণ মানুষকে। ছোট্ট শিশুকে ঘাড়ে চড়িয়ে অবাক করে দেন। মুগ্ধ করার চেষ্টা করেন উপস্থিত সবাইকে।

তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান ও প্রত্যাশা জানান বক্তব্যে।

পুরোটুকু অবশ্য এমন মসৃণ ছিল না। তার উপস্থিতিতেই সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও বাক-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। গোছাতে আরও যে সময় লাগবে, এটা যেন তারই ইঙ্গিত দিল।

সোহেল নামের এক অনুসারীকে মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দিয়েছেন তাবিথ।

সোহেল  জানান, তেজগাঁও এলাকার লিংক রোডে নির্বাচনকালীন একটি কার্যালয় নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রমে আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দিনের পক্ষ থেকে সব ধরনের যোগাযোগ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কথাও জানান সোহেল।

কারওয়ান বাজারের পর বিকেলে মহাখালী আরজত পাড়া মসজিদে নামাজ পড়ে গণসংযোগে নামেন তাবিথ। এরপর যান নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে চলছিল খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণানুষ্ঠান।

সেখানে গিয়েও সবার দোয়া চান ও প্রচারণার কাজ সারেন তাবিথ। প্রথমদিন থেকেই এভাবে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলাবলি করছিলেন, বেশ উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে তাবিথকে।

এদিকে তাবিথ ও মিন্টুর বিষয়েও নানা অসন্তোষ রয়েছে ২০ দলে। কেউ বলছেন, মিন্টু বিভক্ত ঢাকার মেয়র হতে চান না বলেই ইচ্ছে করে ভুল করেছেন মনোনয়নপত্রে। সুযোগ বুঝে ছেলেকে টেনেছেন রাজনীতিতে। তিনি জানতেন, বিএনপি’র কাছে তাবিথের বিকল্প থাকবে না।

কেউ বলছেন, নিজের সম্পদ রক্ষা ও সরকারি দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষায় বেশি মনোযোগী বিচক্ষণ ব্যবসায়ী আউয়াল। এক ঢিলে দুই পাখি মারছেন তিনি। সরকারের সঙ্গে গোপনে হাসছেন, আর বিএনপি’র সমর্থনে ছেলেকে দিয়ে ঢাকার ক্ষমতাও কাড়ছেন।

মাহীর কাছের মানুষরা বলছেন, শেষ পর্যন্তও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমর্থনের আশা করেছিলেন বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী। কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি। খুব কষ্ট পেয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্টের ছেলে।

তাইতো গত দু’দিন ধরে মাঠের তৎপরতা দেখাচ্ছেন না বিষণ্ণ এ তরুণ নেতা। প্রথমদিকে মিডিয়ার সামনে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রশংসা করে নিজের স্মার্ট প্রচারণা চালিয়েছিলেন যে মাহী, তাকে সেভাবে পাওয়া গেল না গত দুইদিন।

তার ঘনিষ্ঠরা আরও বলছেন, যত যাই হোক, নিজেকে খালেদা জিয়ার স্নেহভাজন বলেই জানেন মাহী। আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থীতা নিয়ে ঝামেলা হলে মাহীর কাছের মানুষরা তাকে আশাবাদের গল্প শোনান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি গল্পই থেকে যায়, বাস্তবে পরিণত হয় না।

ঘনিষ্ঠরা আরও বলছেন, প্রথমদিকে মাহীর যাবতীয় পরিকল্পনা ছিল ২০ দলকে পাশে পাচ্ছেন ধরে নিয়ে। বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে ধীরে ধীরে তিনি বিষণ্ণ হতে থাকেন।

বিশেষ করে, বৃহস্পতিবার (০৯ এপ্রিল) চূড়ান্তভাবে যখন জানলেন, তিনি নন, আউয়ালকে না পেয়ে তাবিথ আউয়ালকেই আপন করেছে ২০ দল, মনটা ভেঙে যায় মাহীর।

একই সূত্র জানায়, মাহীকে এখন নতুন করে সব ভাবতে হচ্ছে, পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। কিন্তু উৎসাহ কমে গেছে তাতেও।

এভাবেই হিসেব মিলিয়ে বলা হচ্ছে, মাহী রাজনীতি করে এসেও পিতার কর্মে পিছিয়ে, তাবিথ রাজনীতি না বুঝেও পিতার কর্মে এগিয়ে।

বৃহস্পতিবার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন পাঁচজন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ, আওয়ামীমনা স্বতন্ত্র প্রার্থী সারাহ বেগম কবরী ও মহানগর বিএনপি নেতা আবদুস সালাম তাদের অন্যতম।

যারা সরেছেন তারাতো সরেছেন, যারা রয়েছেন তাদের এগোতে হবে অনেক বুঝে-সুঝে। কারণ, ‘এ নির্বাচন হয়তো বদলে দেবে অনেক হিসেব-নিকেশ’, বলছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *