পূর্ব-ইউক্রেনের দোনবাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু ধ্বংস করেছে রাশিয়া। ফলে ওই এলাকার অধিবাসীদের পালানোর সম্ভাব্য পথ বন্ধ হয়ে গেছে। খবর রয়টার্সের।
খবরে বলা হয়েছে, দোনবাস অঞ্চলের লুহানস্কের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরকে আরেকটি শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে একটি সেতু। রোববার (১২ জুন) ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেতুটি ধ্বংস করে দেন রুশ সেনারা। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ মুহূর্তে পূর্ব-ইউক্রেনের দোনবাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জোরদার অভিযান অব্যাহত রেখেছে রুশ সেনাবাহিনী। কিন্তু লুহানস্কের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে রুশ সেনাদের বড় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। ফলে গত কয়েকদিন ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে উভয় বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে।
লুহানস্কের গভর্নর সেরহি গাইদাই জানান, রোববারও শহরের রাস্তায় রাস্তায় রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর লড়াই হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের বেশিরভাগই দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। তবে এর শিল্পাঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাসায়নিক প্ল্যান্ট এখনও ইউক্রেনীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে।
গাইদাই জানান, সিভেরস্কি দোনেৎস নদীর উপর একটি সেতু গুঁড়িয়ে দিয়েছে রুশ সেনারা। সেতুটি সেভেরোদোনেৎস্ক শহরকে লিসিচানস্ক শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এ নদীর উপর মোট তিনটি সেতু ছিল। এর মধ্যে দুটি ইতোমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে অধিবাসীদের শহর ছেড়ে পালানোর মতো পথ সংকীর্ণ হয়ে আসছে।
এদিকে লিসিচানস্ক শহরে রুশ বোমা হামলায় চারটি বাড়ি ও শপিং সেন্টার ধ্বংস হয়েছে। হামলার সময় এক নারী নিহত হয়েছেন। এর আগে আলাদা এক খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের চোর্টকিভ শহরে একটি অস্ত্রের গুদাম ধ্বংস হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় সেখানকার একটি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ইউক্রেনের দাবি, এ হামলায় ১২ বছর বয়সী এক শিশুসহ ২২ জন আহত হয়েছে। তবে রাশিয়া হতাহতের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, চোর্টকিভ শহরে হামলা চালিয়ে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সরবরাহ করা একটি অস্ত্রের গুদাম ধ্বংস করা হয়েছে।
ওই গুদামে অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল সিস্টেম, বহনযোগ্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং গোলাবারুদ ছিল বলে জানিয়েছে রাশিয়ার সেনা সদস্যরা। তবে বিবিসি স্বাধীনভাবে এসব দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে চলছে তীব্র লড়াই। রুশ বাহিনীর মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ চলছে সেভেরোদনেৎস্ক শহরে। শনিবার (১১ জুন) গোলার আঘাতে রেডিয়েটর থেকে কয়েক টন তেল লিক হওয়ার পর স্থানীয় একটি রাসায়নিক কারখানায় আগুন লেগে যায়। ওই রাসায়নিক কারখানার ভেতরে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের সঙ্গে অন্তত ৮০০ মানুষ আটকা পড়েছে।
কারখানাটি থেকে যোদ্ধাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করে রুশ বাহিনী। প্ল্যান্টটি তারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। দোনবাসে লড়াই তীব্র হওয়ায় শহর ছেড়ে প্রাণে বাঁচতে পালাতে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সামরিক অভিযানের মুখে শহরটির সব রেল ও বাস স্টেশনে এখন মানুষের ভিড়।
একদিকে যখন নিজ শহর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ, তখন দখলে থাকা খেরসন ও মারিউপোল শহরের বাসিন্দাদের পাসপোর্ট দেয়া শুরু করেছে রুশ সরকার। রাশিয়ার গণমাধ্যমের দাবি, ওই সব এলাকায় মানুষ রুশ নাগরিকত্ব নিতে রাজি থাকায় তাদের পাসপোর্ট দেয়া শুরু হয়।
তবে রাশিয়ার এমন কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির দাবি, বাসিন্দাদের জোর করে রাশিয়ার নাগরিক বানানো হচ্ছে, যা আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রকাশ্য লঙ্ঘন। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রধানের কাছে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।