স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূস, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসকে দাওয়াত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার (১২ জুন) মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু সার্ভিস-১ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডেভিড ম্যালপাস, ড. মুহম্মদ ইউনূস ও খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদেরকেই আমন্ত্রণ জানাবে সরকার। এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে আমন্ত্রণপত্র ছাপার কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, যত সমালোচনা হয়েছে, আমাদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। বিশ্বব্যাংক পরে বলেছে, আমাদের ভুল হয়েছে। সব ক্রেডিট শেখ হাসিনার। আমরা তার আদেশ পালন করেছি মাত্র। তিনি সেতু নির্মাণ করেছেন, বিশ্বকে জানিয়েছেন আমরা বীরের জাতি। আমরা দুর্নীতি করি না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, নাহিম রাজ্জাক, সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
স্বপ্নের এ সেতু তিনটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায় হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এরপর মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
চল্লিশ তলার সমান পাইলিং, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার বেয়ারিং আর নদী শাসনে এ মেগা স্ট্রাকচার গড়েছে বিশ্ব রেকর্ড।
খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। পানি প্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে। তেমন একটি নদীকে বশে এনে নিজের টাকায় এমন ইমারত। উদ্যাপনের এর চেয়ে বড় উপলক্ষ কিইবা হতে পারে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি দেশের! সেই উৎসবের প্রস্তুতি এখন পদ্মার দুই পাড়ে।
একেকটি পিলারের নীচের মাটি ছিল একেক রকম। শেষ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১২৮ মিটার পাইলিং করতে হয়েছে। পিলারের ওপর দশ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে, যা একটি বিশ্ব রকের্ড। আবার রেকর্ড পরিমাণ নদী শাসন করেই বাগে আনতে হয়েছে পদ্মাকে।
এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সাত দিনে পর্যায়ক্রমে ৪১৫টি লাইট জ্বালানো হয়। সেতু উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ আগেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ। তবে চোখ ধাঁধানো পদ্মা সেতুর আর্কিটেকচারাল লাইটি স্থাপন হবে উদ্বোধনের পর।
সড়কপথের লাইটিং রাতের বেলায় সেতুকে দিনের মতো আলোকিত রাখবে। শুক্রবার (১০ জুন) ৬২টি লাইট পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সংযোগসহ পুরো সেতুর লাইটিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
গত ৪ জুন প্রথম বাতি জ্বলে ২৪ ল্যাম্প পোস্টে। এরপর প্রতিদিনই বিভিন্ন মডিউলে এবং ভায়াডাক্টে পরীক্ষা চলানো হয় লাইটের। কর্তৃপক্ষ জানায়, রাত ছাড়াও ঘন কুয়াশা বা মেঘলা আকাশে আলো স্বল্পতায় অটো জ্বলে উঠবে বাতিগুলো।