তিস্তার পানি আগামী ৩৬ ঘন্টার মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাষ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে তিস্তার বাড়ন্ত পানি ঢুকেছে অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে। বাড়ি-ঘরে ঢুকছে পানি। তলিয়ে গেছে বাদামসহ উঠতি ফসল। বড় বন্যার আতঙ্কে দিন কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলের কারণে তিস্তায় বুধবার রাত ৯টা থেকে পানি বাড়া শুরু হয়েছে রংপুরে। ওই সময় থেকে ৫১ দশমিক ৮৩ থেকে বেড়ে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৫২ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ৬০ এর ৩৩ সেন্টিমিটার নিচে।
তিনি জানান, আগামী ৪৮ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে এবং কোনো কোনো স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। তিনি জানান, এই পূর্বাভাষ আমরা গত এক সপ্তাহ থেকে সংশ্লিষ্টদেরও জানাচ্ছি। যাতে নদী-অববাহিকার লোকজন নিরাপদে অবস্থান নিতে পারেন এবং গোবাদিপশুসহ অন্যান্য জিনিস সরিয়ে নিতে পারেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা এবং নদীপাড়ের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তিস্তায় পানি বাড়া শুরু হওয়ায় নিলফামারীর ডিমলার ছাতনাই এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারি, এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে পানি ঢোকা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই এলাকার উঠতি বাদাম, আমনের চারা, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে পানির স্রোতে।
পানিবন্দী আরজিনা বেগম (২৮) জানান ‘তিস্তায় কখনো ভাঙ্গন, কখনো খরা, কখনো পানি। এভাবেই আমরা বেঁচে আছি। প্রতিশ্রুতি শুনেছি অনেক। শুনেছি যে বন্যা-প্রতিরোধক বাধ দেয়া হবে। কিন্তু সেটি কবে আলোর মুখ দেখবে আমরা জানি না।’
পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে সঙ্কট আরো বাড়বে। এসব মানুষের জন্য আগাম প্রস্তুতির উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর মহাগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু। তার দাবি এভাবে আর হয় না। রংপুর অঞ্চলকে আর বৈষম্যের মধ্যে রাখা যাবে না। তিস্তাকে শাসন করতে হবে। তিস্তার কৃষিকে বাঁচাতে হবে। আর বন্যার সময় আগাম বন্দোবস্ত রাখতে হবে।