বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের রুমিন ফারহানা (বিএনপি’র সংসদ সদস্য) গতকাল ভালো একটি কথা বলেছেন যে, পদ্মা ব্রিজ সোনা দিয়ে মোড়া।
পদ্মাসেতু নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, রাজপথে স্লোগান দিতাম। তখন ১০ টাকা তেলের দাম বাড়লে বিরাট দাম বেড়ে যেত। তখন আমরা বলতাম, ১০ টাকার তেল খেয়ে স্বর্গে যাব। এখন বলতে চাই, পদ্মা ব্রিজ দিয়ে এবং ওই ব্রিজের টোল দিয়ে স্বর্গে যাব।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সরকার অনির্বাচিত সরকার। সরকার গতকাল বাজেট ঘোষণা দিয়েছে। এই বাজেট জনগণের জন্য নয়। এই সরকার জনগণের শত্রু। এই বাজেট জনগণের গণশত্রু হিসেবে ঘোষণা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিল্প কারখানায় যে গ্যাস ব্যবহার করা হয় সেই গ্যাসের দামও বাড়বে। এভাবে প্রতিটা জিনিসের দাম রাতারাতি বাড়তে থাকবে। আজকের বাজেট পাস করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থাৎ পুলিশ বাহিনী, ও ম্যাজিস্ট্রেট এর জন্য বাড়ানো হয়েছে। সরকার সাধারণ জনগণের পাশে অতীতেও ছিল না বর্তমান জনগণকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের জনগণকে বুঝাতে হবে এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে চলছে। সরকার পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রোজেক্ট, ত্রিশ হাজার কোটি টাকার পর্যায়ে নিয়েছে। বাকি সব টাকা চুরি করেছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভোটের প্রধানমন্ত্রী, আজ আমাদের বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে তাকে বন্দি করে রাখছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে রাখছে।
শেখ হাসিনার কবল থেকে আমাদের অবশ্যই মুক্তি পেতে হবে। আর এই মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদেরকে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনো স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী সরকারকে পছন্দ করে নাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে বলছি এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। এমন এক সময় আসবে আপনি পালানোর সময় পাবেননা। ‘দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সাল হবে রাজপথে’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন মির্জা ফখরুল।
সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাংলাদেশের সবকিছুর দাম বাড়ে, শুধু মূল্য কমেছে সাধারণ মানুষের। আওয়ামী লীগের আমলে সবকিছুর দাম বাড়ে শুধু দাম কমে মানুষের জীবনের, যারা প্রতিবাদ করে তাদের জীবনের।
তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, তারেক রহমান লন্ডন থেকে টেলিফোন করে ব্যবসায়ীদেরকে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর কথা বলেছেন আর এইজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। তারেক রহমানের যদি এতই ক্ষমতা থাকতো তাহলে তিনি লন্ডনে থাকতেন না। আপনারা যদি মনে করেন তারেক রহমানের অনেক ক্ষমতা, তাহলে ভালোভাবে দেশ চালানোর জন্য তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন।
তিনি বলেন, এই যে প্রতিবাদ সভা হচ্ছে। আস্তে আস্তে দেশের জনগণ রাস্তায় নামা শুরু করছে। যেভাবে একের পর এক পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানো হয়েছে একইভাবে আন্দোলনের স্প্যান বসানো হচ্ছে। যেদিন এই স্প্যান বসানো শেষ হবে সেদিন তাদেরকে বিদায় করা হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ইকবাল শ্যামল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।