আজ নিলাম হচ্ছে ৪ বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকা ৬০৯ ড্রাম হাইড্রোজেন পার অক্সাইড

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


চট্টগ্রাম: গাজীপুরের কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড তুরস্ক থেকে ৪ বছর আগে দুই কনটেইনার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডে আমদানি করে। তবে দেশে আসার পর তারা আর সেগুলো খালাস করেনি। বিপজ্জনক এই রাসায়নিক পদার্থ এতোদিন পড়েছিলো চট্টগ্রাম বন্দরে। তবে শনিবার ঘটে যাওয়া সীতাকুণ্ড ট্রাজেডির পর নড়েচড়ে বসে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসকে জানিয়ে দেয়া হয়, একদিনের মধ্যেই ক্যামিকেলগুলো সরিয়ে নিতে হবে। চুপিসারে এই সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়েছে কাস্টমস। আজ সোমবার দুই কন্টেইনারে থাকা মোট ৬০৯ ড্রাম ক্যামিকেল নিলামে তোলা হবে।

রোববার রাতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার আলী রেজা হায়দার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বন্দরে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের চালানটি সোমবার বিকেলে প্রকাশ্যে নিলামে তোলা হবে। চালানটিতে ৩০ হাজার ৪৫০ কেজি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আছে। এটির সংরক্ষিত দাম ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সংরক্ষিত দামের ১০ শতাংশ পে-অর্ডার বা নগদ টাকা দিয়ে আগ্রহীরা নিলামে অংশ নিতে পারবেন।

বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছেন, ওই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি চালান ছিল।

টেক্সটাইল, ডাইং ও এভিয়েশন খাতে এই পদার্থ ব্যবহৃত হয়। উচ্চ চাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে। এটা থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে। মূলত এই ঘটনার পর থেকেই হাইড্রোজেন পার অক্সাসাইড নিয়ে শুরু হয়েছে হৈচৈ।

জানা যায়, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। এটি নিজে দাহ্য নয় কিন্তু এটা উৎকৃষ্ট জারক। এর ধারে কাছে আগুন জ্বলতে জ্বলতে তাপমাত্রা ১৫০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেলে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভেঙে অক্সিজেন ও পানি তৈরি করে। এই অক্সিজেন সেখানে প্রচণ্ড দহন বিক্রিয়া শুরু করে যা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

এদিকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিদর্শক মেহেদী ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, এমনতো সবাই বলছে। তবে এটা নিয়ে তদন্ত প্রয়োজন। আর পৃথিবীতে হাজারো ক্যামিকেল আছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তর এরমধ্যে বিপজ্জনক ১৬টি ক্যামিকেল নিয়ে কাজ করছে। H2O2 বিস্ফোরক পরিদপ্তর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়। আর এটি নিয়ে আপনি প্রয়োজনে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।

আরেকটি সূত্র বলছে, অতিরিক্ত পানির কারণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কার্যক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যায়। অথচ সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পানির ব্যবহারে বিস্ফোরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা হচ্ছে, অভিযানের শুরু থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল হিসেবে পানি ব্যবহারে যথার্থতা প্রমাণিত হয়নি। হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণেই এমন বিস্ফোরণ ঘটে থাকলে, পানি দিয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং সাইনটিস্ট হিসেবে বাংলাদেশি গবেষক ড. আবু আলী ইবনে সিনা বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ধরন ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের নাশকতার প্রচেষ্টাও হতে পারে। এমন ধারনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

পৃথিবীর বিখ্যাত দুই ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডানা ফারবার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি হার্বার্ট আরভিন কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারে কর্মরত আবু আলী ইবনে সিনা বলেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে প্রাথমিক ভাবে বিস্ফোরণের সূচনার জন্য চিহিৃত করা হলেও বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখা খুবই দুর্বল। আমি হার্ভার্ডের ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বেশ কিছু গবেষকদের সাথে আলাপ করেও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের যৌক্তিকতা খুঁজে পাই নি। এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কোন জৈব কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, নতুবা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *