কাতার বিশ্বকাপ যতই ঘনিয়ে আসছে, নিজেদের ততই দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ ফিনালিসিমার শিরোপা জিতে লিওনেল মেসিরা দেখিয়ে দিয়েছেন মহাদেশীয় লড়াইয়ে তারাই সেরা। এই শিরোপা জিতে আলবিসেলেস্তারা নিজেদের টানা অপরাজিত থাকার নতুন রেকর্ডেও গড়লো। লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা এনিয়ে টানা ৩২ ম্যাচে হারেনি।
গত বুধবার রাতে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল আসর কোপা আমেরিকার শিরোপজয়ী আর্জেন্টিনা ও ইউরোপ ফুটবলের ইউরোজয়ী ইতালি মুখোমুখি হয় ফিনালিসিমায়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে আধিপত্য বিস্তার করে পুরো সময়ই দাপট দেখায় আর্জেন্টিনা। ফলাফলও নিজেদের করে নেয় স্কালোনির শিষ্যরা। আজ্জুরিদের ৩-০ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনাকে লাওতারো মার্তিনেস এগিয়ে নেন। পরে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আনহেল দি মারিয়া। শেষ গোলটি করেন পাওলো দিবালা। তবে পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন লিওনেল মেসি। এ নিয়ে নিজেদের ইতিহাসে রেকর্ড টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত রইল আর্জেন্টিনা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। তাদের আগের রেকর্ড ছিল ৩১ ম্যাচের, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে করেছিল তারা।
নিজেদের রেকর্ড তো হলো, তবে বিশ্ব ফুটবলে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়তে মেসিদের পাড়ি দিতে হবে আরও অন্তত ৫ ম্যাচ। আর নিজেদের পরবর্তী ৬ ম্যাচ জিততে পারলে বিশ্বরেকর্ড এককভাবে পাবে দুইবারের বিশ্বকাধারীরা।
টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বর্তমান রেকর্ডটি সেই ইতালির কাছেই রয়েছে। তবে সমান ৩৫টি করে ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড রয়েছে ব্রাজিল, স্পেন ও আলজেরিয়ার।
ইতালি
আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি টানা ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডে আছে ৪বারের বিশ্বকাজয়ী ইতালির হাতে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার পরই মূলত জেগে ওঠে ইতালি। হেড কোচ রবার্তো মানচিনির অধীনে ফর্ম ফিরে পায় তারা। এরপরই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো ২০২০ জিতে নেয়।
মানচিনির শিষ্যরা সেই সময় থেকে টানা তিন বছর কোনো ম্যাচ হারেনি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর উয়েফা নেশনস লিগে পর্তুগালের বিপক্ষে হেরেছিল তারা। আর দলটির ৩৭ ম্যাচে টানা অপরাজিত থাকার বিশ্বরেকর্ড ভাঙে ২০২১ সালের অক্টোবরে। সেবার নেশনস লিগের সেমিফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরেছিল ইতালি।
ব্রাজিল
বিশ্বে প্রথম কোনো দল হিসেবে ব্রাজিলই টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল। সময়টি ছিল ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে। এই সময়ে সেলেকাওরা যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ বিশ্বকাপও ঘরে তোলে। অবশেষে গোল্ড কাপে এই পথচলার ইতি ঘটে। যেখানে মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছিল দলটি।
স্পেন
দুই কোচের অধীনে স্পেন টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল। প্রথমে লুইস আরাগোনেস ও পরে ভিনসেন্ত দেল বস্কের অধীনে, এ সময় কোনো ম্যাচে হার দেখেনি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপ জেতা লা রোহাদের সোনালি প্রজন্ম। তাদের এই রেকর্ড হয়েছিল ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত।
আলজেরিয়া
প্রথম কোনো আফ্রিকান দেশ হিসেবে টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে আলজেরিয়া। ফেনেক ফক্সরা এ সময় আন্তর্জাতিক শিরোপাও ঘরে তোলে। ২০১৯ আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের (আফকন) ফাইনালে তারা সেনেগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। অবশেষে ২০২২ সালের আরেক আফকনে দলটির ৩৫ ম্যাচের দৌড় শেষ হয়। সেবার ইকোয়াটোরিয়াল গিনির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে অঘটনের শিকার হয় দলটি।
আর্জেন্টিনা
বর্তমানে ৩২ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা সর্বশেষ হেরেছিল ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-০ গোলে। তবে গত বছরের কোপা আমেরিকায় সেই ব্রাজিলকেই ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয় আলবিসেলেস্তারা। নীল-সাদা জার্সিধারীরাও দীর্ঘ ২৮ বছর পর কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা ঘরে তোলে।
আর্জেন্টিনার আগের রেকর্ডটি ছিল ৩১ ম্যাচের ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত। সেবার আলফিও বাসিলের অধীনে অবশ্য টানা ৩৩ ম্যাচ জিতেছিল দলটি। তবে ১৯৯১ সালে আর্জেন্টিনা বনাম বাকি আমেরিকা ও আর্জেন্টিনা বনাম বাকি বিশ্বের ম্যাচটি ফিফা অন্তর্ভুক্ত করেনি।
আগামী রোববার রাতে প্রীতি ম্যাচে এস্তোনিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। এরপর ১১ জুন আরেক প্রীত ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার কথা রয়েছে। যদিও ব্রাজিলের বিপক্ষে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের একটি ম্যাচ এখনও স্থগিত হয়ে আছে।
এরপরই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন। কাতারে ২২ নভেম্বর ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে দেশটি। পরে ২৭ নভেম্বর মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলবে। আর গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবেন মেসিরা।