দেশ একটা নীরব দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, একদিকে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে আমাদের টাকার মান। সরকারের দুঃশাসন আর আওয়ামী সিন্ডিকেটের কারণেই এসব ঘটছে।
শনিবার (৪ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় দেশের বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপপলস পার্টির উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে দেখুন, চাল থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। কী কারণে এই ঊর্ধ্বগতি? আজকের পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে, আমাদের এখানে যে মূল্যস্ফীতি ঘটছে, এটা নজিরবিহীন।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে এই মূল্যস্ফীতি অন্যদিকে আমাদের টাকার মান কমে যাচ্ছে। কিসের জন্য? এই সরকারের দুঃশাসনের জন্য। গায়ের জোরে তারা সরকারে আছে, সিন্ডিকেট করে সরকারে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তাদের আওয়ামী সিন্ডিকেটের হাতে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এই আওয়ামী সিন্ডিকেট।’
এ অবস্থার পরিবর্তনে আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এজন্য আজকে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই আলোচনা সভার টেবিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আছেন। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, এদেশে যারা এই স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন করে না তাদের বিরোধিতা করে, এদেশের এমন গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক দল-জোট ও ব্যক্তিকে নিয়ে একটা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা আমরা চালাচ্ছি।’
‘আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি, এজন্য আনন্দিত। তার চেয়ে বেশি আনন্দিত যে, আমরা সবচাইতে বেশি সাড়া পেয়েছি জনগণের মধ্যে। কারণ জনগণ আজকে ঐক্যবদ্ধ। শুধুমাত্র রাস্তায় নেমে একটি কার্যকর আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। জনগণ সেই অপেক্ষায় আছে।’
‘শ্রীলংকায় রাস্তায় নেমে জনগণের অভ্যুত্থানের’ মতো বাংলাদেশের মানুষও রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
‘ওদের অধীনে নির্বাচন হবে না’
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ, এই সরকারের প্রতি তারা আস্থা হারিয়েছে। তাই আজকে দেশের জনগণ চায় যত শিগগির সম্ভব এই সরকারের পতন। জনগণ চায় এদেশে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক। তাহলেই আজকে বাংলাদেশের যে সংকট তার প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধান সম্ভব। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার সম্ভব, মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব, কথা বলার অধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অর্থনীতিতে যে লুটপাট হচ্ছে সেই লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব।’
‘এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে এদেশে কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না, তারা অতীতের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণ দিয়েছে। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে এটা স্বীকৃত। অতএব, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির আবদুস সালাম, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, এনডিপির আবু তাহের, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।