পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা উপভোগ করতে পারেননি ইমরান খান। যে কারণে ভালো কিছু করতে গেলেও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। বুধবার (১ জুন) টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই চরম সত্য স্বীকার করে নিয়েছেন।
এতে দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু অন্য কোথাও ছিল বলেই আভাস মিলেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতার ভরকেন্দ্রটি কোথায় ছিল, তা সবার জানা আছে। তার মতে, ইনস্টিটিউশনগুলো যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে পাকিস্তান ভেঙে তিন টুকরো হয়ে যাবে।-খবর ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের
চলতি বছরের শুরুতে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ক্রিকেটে পাকিস্তনের বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সমস্যা।
ইমরান খান বলেন, বেলুচিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে বিদেশে ভারতীয় থিংকট্যাংকগুলো চিন্তাভাবনা করছে। তাদের পরিকল্পনা আছে। যে কারণে আমি চাপ দিয়ে যাচ্ছি। তবে কাকে তিনি চাপ দিচ্ছেন, সেই কথা উল্লেখ করেননি।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে যেদিন অনাস্থা ভোট হয়েছে, সেই রাতের ঘটনা স্মরণ করতে বলা হয়েছিল তাকে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর সরকার ছিল নাজুক অবস্থায়। জোট সরকারের অংশীদার খুঁজতে হয়েছিল। ভবিষ্যতে যদি একই অবস্থা তৈরি হয়, তবে পুনর্নির্বাচনের পথ বেছে নেবেন তিনি।
ইমরান খান বলেন, আগামীতে দোদুল্যমান অবস্থায় না থেকে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে হবে, নতুবা দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আমাদের হাত বাঁধা ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছি। আমাদের হাতে ক্ষমতা ছিল না।
সাবেক এই কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকা বলেন, সবাই জানেন যে পাকিস্তানে ক্ষমতা কোথায় থাকে। কাজেই তাদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে আমাদের।
এ মন্তব্য ঘিরে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান। তিনি জানান, সবসময় তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারা অবশ্য বেশ কিছু ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু তারা কিছু কাজ করেননি, যা তাদের করা উচিত ছিল।
ইমরান খান বলেন, ক্ষমতা ছিল তাদের হাতেই। কারণ তারা জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোর (এনএবি) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতো। এগুলোতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
তার সরকারের জবাবদিহিতা থাকলেও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। ইমরান খান বলেন, আমার দায়বদ্ধতা থাকলেও পরিপূর্ণ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব না থাকায় কোনো ব্যবস্থাপনাই কাজ করেনি। একটি ব্যবস্থা তখনই কাজ করে, যখন দায়বদ্ধতা ও কর্তৃত্ব একটি জায়গায় থাকে।
তার মতে, বাইরের শত্রুর আক্রমণের শঙ্কা থাকায় শক্তিশালী সামরিক বাহিনী অপরিহার্য। কিন্তু শক্তিশালী সরকার ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের জন্য বড় সমস্যা। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে লিখিতভাবে আমি নিশ্চিত করতে পারব, তারা ও সামরিক বাহিনী গোল্লায় যাবে।
ইমরান খান বলেন, যদি দেউলিয়া হয়ে যায়, তবে দেশের জন্য এরচেয়ে আর খারাপ কী ঘটতে পারে। দেউলিয়া হওয়ার পথে পাকিস্তান। যদি তা-ই ঘটে, তবে ওই সব প্রতিষ্ঠানেও তার প্রভাব পড়বে কিনা? পড়বে সামরিক বাহিনীর ওপর। সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত আসলে, আমাদের কাছ থেকে কী ছাড় নেওয়া হবে? পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ।
সাবেক এই ক্রিকেট তারকা আরও বলেন, পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা হারালে তিন টুকরো হয়ে যাবে পাকিস্তান। যদি চলতি সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়, তবে এ দেশ আত্মঘাতী হতে যাচ্ছে।
অনাস্থা ভোটের রাতের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। হাটে হাঁড়িয়ে ভেঙে যাবে। তবে এখন আমি বিস্তারিত কিছু বলছি না। কিন্তু যখন ইতিহাস লেখা হবে, তখন অনাস্থা ভোটের রাতের কথাও আসবে। কারণ সেদিন পাকিস্তানের ইনস্টিটিউশনগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তার মতে, সেই সব প্রতিষ্ঠানই পাকিস্তানকে দুর্বল করে দিয়েছে, যেগুলো এ দেশটির ভিত্তি দিয়েছিল, শক্তিশালী করেছিল। তিনি বলেন, আমি নিরপেক্ষভাবে বলছি, করোনা মহামারি সত্ত্বেও পিটিআই সরকারের অর্থনৈতিক নৈপুণ্য অলৌকিকতার চেয়ে কম না।