ইতালিকে হারিয়ে বিশ্বসেরার খেতাব জিতল আর্জেন্টিনা

Slider খেলা


কোপা আমেরিকাজয়ী ও ইউরোজয়ীর লড়াই লা ফিনালিসিমায় ইতালিকে হারিয়ে বিশ্বসেরার খেতাব জিতে নিল আর্জেন্টিনা। ২৯ বছর পর দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে মানচিনির শিষ্যদের ৩-০ হারায় আলবিসেলেস্তেরা।

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বুধবার (০১ মে) দলের হয়ে একটি করে গোল করেন লাউতারো মার্তিনেজ, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও পাওলো দিবালা। তিন গোলের দুটিতেই অবদান রাখেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।

লা ফিনালিসিমার লড়াইয়ে প্রথমার্ধ পুরোটাই নিজেদের আধিপত্যে রেখেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে ৫৪ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে তারা ৬টি শট নেয়, যার মধ্যে ৩টিই ছিল গোলমুখে। বিপরীতে ইউরো সেরাদের নেয়া ৫ শটের ২টি ছিল গোলমুখে। কিন্তু আলবিসেলেস্তেদের প্রাচীর এমিলিয়ানো মার্তিনেজের গ্লাভস ফাঁকি দিতে পারেনি সে সব শট।

ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর ৬ মিনিটে বল নিয়ে ইতালির রক্ষণভাগে ঢোকার পথে বাধার সম্মুখীন হন মেসি। রেফারির বাঁশিতে ফ্রি কিকের সুর। তবে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক ম্যাজিশিয়ানের নেয়া শটটি পৌঁছায়নি ইতালির গোলবারে। ম্যাচের ১২ মিনিটে প্রথম আক্রমণে যায় ইউরোজয়ীরা। কিন্তু আলবিসেলেস্তদের গোলবারের প্রাচীর এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বিশ্বস্ত গ্লাভস সে শট পরাস্ত করতে পারেনি।

ম্যাচের ২০ মিনিটে গোল হজম করতে গিয়ে রক্ষা পেল কোপাজয়ীরা। জিওভানি ডি লরেঞ্জোর নেয়া শট গোলবারের সামনে থেকে ক্লিয়ার করে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের ফুটবলার ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। পরের মিনিটেই ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ইতালি। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তারা।

ম্যাচের ২৬তম মিনিটে মেসির জোরালো শট ফিরে আসে ইতালির রক্ষণদেয়ালে বাধা পেয়ে। দুই মিনিট পর মেসিকে আর আটকাতে পারেননি বনুচ্চিদের রক্ষণদেয়াল। ম্যাচের ২৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের বাম কর্নার দখলে নিয়ে আক্রমণে ওঠেন লিওনেল মেসি। পায়ের কারিকুরিতে ইতালির রক্ষণভাগের ফুটবলারদের ফাঁকি দিয়ে বল পাঠান লাওতারো মার্তিনেজের উদ্দেশে।

পেনাল্টি এরিয়া থেকে আলতো ছোঁয়ায় বল জালে জড়ান মার্তিনেজ। হাত বাড়িয়ে বল নাগালে পাননি মেসির পিএসজি সতীর্থ জিয়ানলুইজি ডোনরুম্মা।

ম্যাচের ৩৯ মিনিটে বলে হেড দিতে গিয়ে লিওনার্দো বনুচ্চির সঙ্গে ধাক্কায় খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মেসি। প্রথমাবস্থায় গুরুতর মনে হলেও মিনিট কয়ের পর তিনি উঠে দাঁড়ালে স্বস্তি ফেরে আর্জেন্টিনা শিবিরে।

বিরতিতে যাওয়ার আগে দ্বিতীয় আঘাত হানেন ডি মারিয়া। বরুচ্চির পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে প্রতি আক্রমণে যায় লাওতারো মার্তিনেজ। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে প্রবেশ করে বল বাড়ান ডি মারিয়ার উদ্দেশে। বল জালে জড়াতে কোনো রকম ভুল করেননি মারিয়া। আর তাতেই প্রথমার্ধ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ করে আর্জেন্টিনা।

বিরতির পর ফের আক্রমণে আধিপত্য দেখায় কোপাজয়ীরা। তার আগে ম্যাচের ৫৬ মিনিটে প্রায় আত্মঘাতী গোল হজম করতে চলেছিল ইতালি। গোল লাইনের ঠিক পাশ থেকে বল ঠেকিয়ে শেষ পর্যন্ত ডোনারুম্মা দলকে আরেকটি গোল হজম থেকে রক্ষা করে। মূলত ওই সময় প্রতি আক্রমণে ওঠা আর্জেন্টিনার থেকে বল কেড়ে নিয়ে ক্লিয়ার করতে ডোনারুম্মার উদ্দেশে বল পাস দেস ইতালির রক্ষণভাগের ফুটবলার।

ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ডোনারুম্মা নৈপুণ্যে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন ডি মারিয়া। ম্যাচের ৬১ মিনিটেও এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারে নেয়া জোরালো শট ফিরিয়ে দিয়ে হতাশ করেন ইতালির গোলবারের প্রাচীর। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে দারুণ সুযোগ নষ্ট করে ম্যানুয়েল লাজনিনি। পরের মিনিটে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে প্রবেশ করার মুখে জর্জিনিওকে চোখে শর্ষেফুল দেখিয়ে বল নিয়ে প্রতি আক্রমণে যান মেসি। একক আধিপত্য ইউরোজয়ীদের রক্ষণভাগে ঢুকে গোলের উদ্দেশে শট নেন এই ক্ষুদে জাদুকর।

কিন্তু এ যাত্রায়ও ইতালিকে গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন ডোনারুম্মা। মেসির পিএসজি সতীর্থ তাকে প্রতিহত করে আরেকবার হতাশ করে ম্যাচের ৬৭ মিনিটে। ম্যাচের ৭১ মিনিটে ইতালির রক্ষণভাগে প্রবেশের পথে বাজেভাবে মেসিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন জিওভানি ডি লরেঞ্জো। পরের মিনিট ডি বক্সের কিছু দূর থেকে ফ্রিক নিয়ে ফের ব্যর্থ হন আর্জেইন্টাইন সুপার স্টার। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে ডি মারিয়াকে বাজেভাবে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন নিকোলো বারেলা। ম্যাচের ৮১ মিনিটে পেনাল্টি এরিয়াতে বল পেয়েও গোর করতে ব্যর্থ হন লানজিনি। ম্যাচের অতিরিক্ত মিনিটে লো সেলসো তুলে পাওলো দিবালাকে মাঠে নামান লিওনেল স্কালোনি। ততক্ষণে অবশ্য জয় নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যারাডোনার উত্তরসূরিদের।

মাত্র ৪ মিনিটের জন্য মাঠে নেমে ইতালির ক্ষতে লবণ দেন দিবালা। ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে বল পায়ে এগিয়ে যান মেসি। ডি বক্সে ঢুকে শট নিতে গিয়ে তার পা থেকে ফস্কে যায়। পাশে থাকা দিবালা এগিয়ে গিয়ে বল জড়ান জালে। পাঁচটি দুর্দান্ত সেভের পর, ষষ্ঠ শটটি ফেরাতে ব্যর্থ হন ডোনারুম্মা। ইতালিকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় বিশ্বসেরার খেতাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *