করোনা মহামারীর দাপটে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, শ্রমিক শোষণ করে শ্রম আদায় ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও শ্রমিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণসহ চতুর্মুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে মালয়েশিয়ার পাম শিল্পের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোজ্য পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির অর্থনীতির দ্বিতীয় অর্থ যোগানদাতা পাম তেল শিল্প। এই পাম তেল শিল্পের সিংহভাগ কর্মী ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের। মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা মালয়েশিয়ায় পাম তেল শিল্পে আর কোনো কর্মী পাঠাবে না।
দেশটিতে পাম তেল উৎপাদন বিগত সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন প্রায় তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগে নেমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অচলাবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যের ধারক পাম শিল্প তার অস্তিত্ব বিলীন হবে। দর কষাকষিতে মগ্ন কলিং ভিসা বন্ধ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে। এর মাঝে করোনা মহামারীর ক্ষতি এবং সমানতালে চলছে দেশটিতে শ্রমিক নির্যাতন ও অব্যাবস্থাপনা।
শ্রমিক নির্যাতনে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার ছয়টি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যারা আমেরিকায় পণ্য রফতানি করে। যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান শ্রমিক নির্যাতনের কথা বার বার অস্বীকার করছেন।
এম সারাভানান পাল্টা জবাবে বলেছেন, আপনারা হাতে-নাতে এমন কোনো প্রমাণ দেখান তারপর আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। কলিং ভিসার সিন্ডিকেট নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর এম সারাভানান এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন।
একটি রাজ্যের মন্ত্রী সারাভানানের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কেন তদন্ত করে হাতে-নাতে প্রমাণ দিতে হবে? কারণ আমাদের সমস্যা এখানেই তাই যথাযথ তদন্ত করে আমাদেরকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইন্দোনেশিয়া কী কারণে হঠাৎ শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করল তা জানা না গেলেও মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা স্পষ্ট যে ত্রুটিপূর্ণ শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা, জোর করে শ্রম আদায়, এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অপ্রতুল মজুরি, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়, নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতকরণে নিয়োগকর্তার চরম গাফিলতিসহ সব মিলিয়ে অসংখ্য জটিলতার কোনো সুষ্ঠু সমাধান না হওয়ায় এই স্বীদ্ধান্ত।
তবে মালয়েশিয়া তার প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী আনতে বাধ্য হবে এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এম সারাভানানের স্বীকৃত ২৫ ও ২৫০ সিন্ডিকেটে শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠানোর স্বিদ্ধান্ত যে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী হবে সরকার ও জনগণ বুঝে গেছেন। কারণ সিন্ডিকেটে কর্মী নিয়োগের আগে যেমন প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করা হতো। ঠিক এবারো সিন্ডিকেট হলে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি আদায় করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই টাকা মালয়েশিয়ায় এসে চার বছরেও বৈধভাবে কাজ করে উসুল করা প্রায় অসম্ভব। তখন বাধ্য হয়ে অবৈধ হয়ে জেলে যেতে হবে নয়ত দেশে ফেরত যাওয়ার আগ পর্যন্ত পালিয়ে বেড়াতে হবে।