ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজের মতো দেশের অন্য সরকারি কলেজগুলোকেও সংশ্লিষ্ট এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনতে যাচ্ছে সরকার।
প্রায় আট বছর আগে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে বেসরকারি কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই থাকছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এখন কলেজগুলোর তালিকা সংগ্রহ করে কোন কলেজ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হবে, সেই কাজ শুরু হয়েছে।
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশে কলেজ আছে প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এত শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে নির্দেশনা দেন। এ লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর একই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সভা হয়। সভায় উপাচার্যরা কলেজগুলোকে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে একমত হন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়—এমন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সে সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট কমাতে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ ঘোষণা করে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলেও ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নানা রকম জটিলতার কথা তুলে অধিভুক্ত করার কাজটি সময়মতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এরপর আবার এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
শুরুতে এসব কলেজের সময়মতো পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ শিক্ষা কার্যক্রমে বেশ কিছু সমস্যা হয়। এ নিয়ে তখন আন্দোলনও হয়েছিল। তবে এখন এই কলেজগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
এ অবস্থায় দেশের অন্য সরকারি কলেজগুলোকেও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো—বেসরকারি কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে, আর সরকারি কলেজগুলো বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। কোন কলেজ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা যায়, সেই কাজ শুরু হয়েছে। বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে।
একসময় স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়—এমন কলেজগুলো কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি মূলত একটি অ্যাফেলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয়।
তখন কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এ কারণে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দিতে বলেন। যদিও সেটি পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত কিছুটা দেরিতে হলেও সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার কাজ শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনই হবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—এমন মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।