‘রিয়াল মাদ্রিদ’ দলটাকে বলা হয় চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাটা যে রাজকীয় মাদ্রিদের চেয়ে বেশিবার জিততে পারেনি কেউই। দুর্দান্ত দলও এই প্রতিযোগিতায় লস ব্লাঙ্কোসদের সামনে ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। তাই হল আজ প্যারিসের স্তাদে দি ফ্রান্সে। সালাহ-মানে-অ্যালিসনদের দুর্দান্ত লিভারপুলকে ভিনিসিয়াসের একমাত্র গোলে হারিয়ে ১৪তম বারের মতো ইউরোপ সেরার শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
ইউরোপের রাজা যে রিয়াল মাদ্রিদ তা আরও একবার প্রমাণ পেল বিশ্ব। ম্যাচ জুড়ে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দেওয়া লিভারপুলকে এক ঝলকের একটু বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবলেই যে পরাস্ত করলো আনচেলত্তির শিষ্যরা। ৫৯ মিনিটে ভালভার্দের পাস থেকে ভিনিসিয়াসের করা একমাত্র গোলটিই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলো। তাতে ২০১৮ সালের পর আবার ইউরোপ সেরা রিয়াল মাদ্রিদ। ১৪তম শিরোপা জেতা রিয়াল মাদ্রিদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের শিরোপা সংখ্যা ঠিক অর্ধেক।
এর আগে প্রথমার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল লিভারপুলের হাতে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ ফেরে চেনা ছন্দে। ডানপ্রান্ত দিয়ে ভালভার্দে দুর্দান্ত দৌড়ের পর পাস দিলেন বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা ভিনিসিয়াসকে। সুযোগসন্ধানী ব্রাজিলিয়ান দিলেন আলতো টোকা। ব্যাস! দুর্দান্ত লিভারপুলের জালে মাদ্রিদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধের প্রথম উপহার।
এরপর ম্যাচে ফিরতে লিভারপুল চেষ্টা করেছে অনেক। কিন্তু সাদা জার্সিধারীদের গোলপোস্টে যে এক দৈত্য দাঁড়িয়ে আছেন দেয়াল হয়ে । লিভারপুলের সব চেষ্টা ফিরল সেই দেয়াল থেকেই। কর্তোয়া যেভাবে একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়েছেন তাতে মাদ্রিদের উচিত তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেওয়া।
প্রথমার্ধে ১৬ মিনিটেই ডি-বক্সে রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডারদের ভেল্কি দেখিয়ে আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড বল দিয়েছিলেন সালাহকে। কিন্তু সালাহ’র দুর্বল শট রুখে দেন কর্তোয়া। কয়েক মুহূর্ত পর আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড নিজেই আকাশে বল পাঠিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন।
পরের মিনিটেই আবার গোলের সুযোগ আসে লিভারপুলের সামনে। নিজেদের বক্সে ক্লিয়ার করে বাঁচতে গিয়ে মাদ্রিদ বল তুলে দিয়েছিল থিয়াগোর পায়ে। তার দূরপাল্লার শট কোনমতে ঠেকান কর্তোয়া।
২০ মিনিটে দুর্ভাগ্য বঞ্চিত করে লিভারপুলকে। দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলে শট নিয়েছিলেন সাদিও মানে। তার শট ফেরে পোস্টে লেগে। ফিরতি বল লুফে নিয়ে দলকে বাঁচান কোর্তোয়া।
২৫ মিনিটে সুযোগ পায় রিয়াল মাদ্রিদ। বা-প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াসের ক্রস অল্পের জন্য নাগাল পাননি বেনজেমা।
প্রথমার্ধের একদম শেষের দিকে গোল করে ফেলেছিলেন বেনজেমা। লম্বা থ্রু-বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলে শুট করতে গিয়েও জায়গার অভাবে তা পাস দিতে যান বেনজেমা। লিভারপুল ডিফেন্ডাররা সেই বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে আবার বল পান বেনজেমা। অ্যালিসনকে পরাস্ত করলেও রেফারি বাজান অফসাইডের বাঁশি। পরে ভিএআর চেক করে নিজের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন রেফারি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন মদ্রিচ-ক্রুস। ডান প্রান্ত দিয়ে একের পর এক আক্রমণে উঠতে থাকেন উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার ভালভার্দে। আক্রমণে ওঠার ফলও পায় তারা।
৫৯ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে এমন এক আক্রমণে উঠেন ভালভার্দে। দারুণ গতিময় দৌড়ে হারান লিভারপুলের রক্ষণভাগকে। ফাঁকা জায়গা করে নিয়ে তিনি পাস বাড়ান বাঁপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া ভিনিসিয়াসকে। দ্রুত বলের কাছে পৌঁছে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান এবারের আসরের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের মালিক।
৭৪ মিনিটে অ্যালেক্সান্ডার-আর্নল্ডের বাড়ানো ক্রসে ডিয়েগো জোতা পা লাগাতে পারলেই সমতায় ফিরতো লিভারপুল। কিন্তু এই পর্তুগিজ বলের নাগালই পেলেন না।
৭৬ মিনিটে জোড়া বদল লিভারপুলের। থিয়াগোর বদলে নামলেন ফিরমিনো। হেন্ডারসনের বদলি নাবি কেইটা। ৮০ মিনিটে লস ব্লাঙ্কোসদের জাল লক্ষ্য করে শট নেয় অলরেডরা। দলকে সে যাত্রায় বাঁচান কর্তোয়া।
৮১ মিনিটে কর্তোয়ায় ফের বেঁচে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। বিপজ্জনভাবে ঢুকে পরে মোহামেদ সালাহ গোলে শট নেন। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে তাকে গোলবঞ্চিত করেন রিয়ালের দৈত্যাকার গোলরক্ষক।
ম্যাচের বাকিটা সময় সাদা জার্সিধারীরা দাঁতে দাঁত চেপে ঠেকিয়ে গেছে অলরেডদের আক্রমণ। হার টের পেয়েই হয়তো শেষদিকে হাল ছেড়ে দেয় সালাহ-ফিরমিনো। অতিরিক্ত সময়ের পাঁচ মিনিট শেষ হতেই রেফারির বাঁশি। প্যারিসের স্তাদে দি ফ্রান্স তখন ‘আলা মাদ্রিদ’ ধ্বনিতে মুখরিত।