দীর্ঘ ১১ মাস ধরে উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে নতুন করে সুবিধাভোগীদের তালিকায় নাম নিবন্ধনেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। সার্ভার জটিলতায় স্কুলপর্যায়ে থেকে উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের নাম নিবন্ধনেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও সব শিক্ষার্থীদের নাম এখনো সার্ভারে যুক্ত করা যায়নি। গত কয়েক দিন ধরেই স্কুলপর্যায়ে থেকে সার্ভার জটিলতায় বিষয়ে জেলা ও থানা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে সার্ভার জটিলতার কারণে সারা দেশেই একই ধরনের সমস্যার কথা আসছে। নাম নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর বিষয়েও আভাস দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগে প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হতো। সর্বশেষ প্রকল্পের সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু গত জুলাই থেকে এ প্রকল্প নেই। ফলে ‘নগদ’ যে সফটওয়্যারে কাজ করত, তা আর নেই। এ কারণে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি রাজস্ব খাতের অর্থ থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে থেকেই নানা জটিলতায় গত বছরের জুলাই থেকে প্রায় ১১ মাস শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির এ অর্থ পায়নি। এদিকে গত প্রায় এক বছর সময় ধরে উপবৃত্তির অর্থ না পেয়ে অনেক অভিভাবকের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানের পড়ালেখা নিয়েও অনেকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, প্রাথমিকের প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। আর এই তথ্য খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই। সরকারের তথ্য বলছে, করোনাকালে এক বছরের ব্যবধানে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে আট লাখের বেশি শিশু শিক্ষার্থী কমেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারিতে (এপিএসসি) এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মার্চে এই শুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ করতে এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতেই নতুন করে এখন উপবৃত্তির আওতায় তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপর চলতি বছরের ছয় মাসের টাকা দেয়া হবে। গত বছরের জানুয়ারিতে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা এখনকার তথ্যে মিলবে না। এ জন্য শিক্ষকদের ফের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিভাবক নতুন তালিকায় যে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দিয়েছেন, সেটির মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হবে।
বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের তথ্য সার্ভারে আপলোড করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। গত ১৬ মে থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম গত বুধবার শেষ হয়েছে। কিন্তু অনেকে ৩০-৪০ শতাংশ তথ্য আপলোড করতে পারেননি। সার্ভার জটিলতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুরুর দিকে সার্ভারে কিছু সমস্যা ছিল। পরে এর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তথ্য এন্ট্রির কাজ শেষ না হলে সময় বাড়ানো হবে। শিক্ষকদের কেউ হয়রানির চেষ্টা করলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিপিই সূত্র জানায়, আগের বছরগুলোতে প্রতিজন শিক্ষার্থী কিডস এলাউন্স ছাড়াও জামা জুতা এবং স্কুল ব্যাগ কেনার জন্য টাকা পেত। এখন সরকারের রাজস্ব খাত থেকেও একই হারে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রতিজন শিক্ষার্থীকে বছরে চার কিস্তিতে তিন মাস অন্তর অন্তর এ অর্থ দেয়া হবে। তবে যেহেতু এক বছরের টাকা বকেয়া পড়ে গেছে সেক্ষেত্রে এই বকেয়া টাকা একসঙ্গে অথবা দুই কিস্তিতে দেয়া হতে পারে।