রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রাণে বেঁচে যান পুতিন। এমনটাই দাবি করেছেন ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ। তবে এ চেষ্টার পেছনে ইউক্রেন নয়, তৃতীয় একটা দেশ বা অঞ্চলের একটি ভাড়াটে বাহিনী ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম ইউক্রেনস্কা প্রাভদাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন বুদানভ। সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (২৪ মে) প্রকাশিত হয়। বুদানভের দাবিটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে শেয়ার করেছেন ইউক্রেন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যান্টন গেরেশচেঙ্কো।
সাক্ষাৎকারে বুদানভ বলেন, ইউক্রেন অভিযানের কয়েকদিন পরই পুতিনকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। এমনকি তার ওপর হামলাও চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রায় দু’মাস আগে ককেশাস থেকে আসা একটা দল পুতিনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। যদিও এটা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। কিন্তু এটা যে সত্যই ঘটেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। বুদানভের এ দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে ইউক্রেন অভিযান শুরুর পর এটা ছিল পুতিনকে হত্যার প্রথম চেষ্টা।
ককেশাস অঞ্চল বলতে মূলত পূর্ব-ইউরোপের দেশ আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া ও রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ভূখণ্ডকে বুঝানো হয়। তবে ঠিক কোন দেশ বা কারা এ আক্রমণ করেছিল তা স্পষ্ট করেননি বুদানভ।
এক সপ্তাহ আগেই কিরিলো আরও একটি দাবি করেন। তিনি বলেন, পুতিনের স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হচ্ছে এবং ক্রেমলিনে তার বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান হতে চলেছে। এক বছরের মধ্যেই রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তন হবে বলেও জানান তিনি। তবে এসব দাবি নাকচ করে দেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।
ককেশাস অঞ্চলে পুতিনের একাধিক শত্রু রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকায় তাদের সঙ্গে আগে থেকে দ্বন্দ্ব চলছিল পুতিনের।
২০০৪ সালে জর্জিয়ায় হামলার নির্দেশ দেন পুতিন। এই হামলা ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ওই অঞ্চলটিতে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে পুতিনের বাহিনীকে।
এ ছাড়া ২০২০ সালে নাগোরনো-কারাবাখ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধ বাধে প্রতিবেশী দুই দেশ আর্মেনিয়া ও আজেরবাইযানের। সেই যুদ্ধে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন অভিযানের পর থেকে পুতিন গুপ্তহত্যার ভয়ে ভীত বলে ধারণা করা হয়। গত মাসে রাশিয়ার ডানপন্থী এক রাজনীতিবিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পুতিন তার ‘পরমাণু ব্রিফকেস’ নিয়ে যান।
২০১৭ সালে চলচ্চিত্রকার অলিভার স্টোনকে পুতিন বলেছিলেন, এ পর্যন্ত তাকে অন্তত ৫ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে নজরদারি করেন বিধায় প্রতিবারই তিনি বেঁচে গেছেন।
ন্যাটোর সদস্য হওয়া ঠেকাতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন পুতিন। এর কয়েকদিন পরই পুতিনকে হত্যার উসকানি দিয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনেটর।
মার্চ মাসের শুরুর দিকে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, পুতিনকে হত্যার মাধ্যমে যে কেউ রাশিয়াসহ সারা বিশ্বের বিশাল উপকার করতে পারেন। সাক্ষাৎকারে গ্রাহাম জুলিয়াস সিজার ও অ্যাডলফ হিটলারসহ প্রখ্যাত রাজনীতিবিদদের হত্যার উদহারণ তুলে ধরেন।
গ্রাহাম বলেন, রাশিয়ায় কী কোনো ব্রুটাস নেই? কিংবা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে কোনো সফল কর্নেল স্টাফেনবার্গ? এটাই একমাত্র পথ, রাশিয়ার কোনো ব্যক্তিই পারে পুতিনকে দুনিয়া থেকে শেষ করে দিতে।
প্রায় একই সময়ে মার্কিন এক সাংবাদিকও পুতিনকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এক টকশোতে সাংবাদিক শন হ্যানিটি বলেন, রুশ নেতাকে আততায়ীর মাধ্যমে হত্যা করা উচিত। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিল বুদানভের দাবি অনুযায়ী, পুতিনের গুপ্তহত্যার এ আলোচনার কিছুদিন পরই তাকে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়।