রাজত্বটা অস্ট্রেলিয়ারই ছিল। অন্য সব দলের খেলোয়াড় মিলিয়ে তৈরি করা বিশ্ব একাদশকেও হারাত অস্ট্রেলিয়া। স্বর্ণযুগের ওই সময়েই টানা তিন বিশ্বকাপ জিতে রেকর্ড গড়েছিল অসিরা। ২০১১-তে ছন্দপতন। তবে মাত্র চার বছর। আবারও ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। রোববার মেলবোর্নে একাদশ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের পঞ্চম শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া।
এই শিরোপা ক্রিকেট রাজত্ব পুনরুদ্ধারের, একইসঙ্গে আবেগময় এক মহাপূর্ণতারও। ঘোষণা দিয়েই ক্যারিয়ারের শেষ একদিনের ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন মাইকেল ক্লার্ক। ক্রিকেট বিধাতা তাকে নিরাশ করেননি। নিউজিল্যান্ডের ১৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে তার ব্যাটেই এনে দিয়েছেন শিরোপাজয়ের রসদ।
জয় থেকে নয় রান দূরত্বে থাকাবস্থায় বিদায় নেওয়ায় খানিকটা আক্ষেপ থাকতে পারে ক্লার্কের। তবে ৭২ বলে খেলা ৭৪ রানের ইনিংসেই তো উড়ে গেছে টুর্নামেন্ট জুড়ে ঝড় তোলা কিউই বোলাররা আর অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে শিরোপাজয়ের স্বাদ।
এই জয়ে আলাদা একটা মাহাত্মও আছে। বিশ্বের যে পাঁচটি বৃহৎ অঞ্চলে ক্রিকেট খেলা হয়, সবগুলোতেই বিশ্বকাপ জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়ল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবার উপমহাদেশে ভারতের মাটিতে, ১৯৮৭ সালে। পরেরবার ইউরোপের ইংল্যান্ডে, ১৯৯৯তে। তৃতীয়বার ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। টানা তিন বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়া ২০০৭ বিশ্বকাপ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বাকি ছিল শুধু নিজ দেশ-মহাদেশ। সেটিও পূর্ণ হয়ে গেল রোববার।
এগারটি বিশ্বকাপের পাঁচটিই জয় করে ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেদের অবস্থানটা আরো পোক্ত করল অসিরা। বাকি ছয় বিশ্বকাপের দুটি করে চারটিতে জিতেছে ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অপর দুটির চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা।
মেলবোর্নে পঞ্চম শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে কখনোই পিছিয়ে ছিল না অস্ট্রেলিয়া। তিন বাঁ হাতি পেসার মিচেল জনসন, জেমস ফকনার আর মিচেল স্টার্কের বোলিং তোপে কাজ সারা হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধ্বেই।
কিউইদের দাড় করানো ১৮৩ রানের লক্ষ্যে শুরুতে খানিকটা ধাক্কা লেগেছিল অ্যারন ফিঞ্চের আউটে। সেটি ধাক্কা হয়ে ওঠার আগেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার।
৬৩ রানের মাথায় ওয়ার্নার ফিরে গেলে ক্রিজে ধাতস্থ হতে খানিকটা সময় নেন স্টিভেন স্মিথ আর মাইকেল ক্লার্ক। তারপর যতক্ষণে নিউজিল্যান্ড এই জুটি ভাঙল, ততক্ষণে জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার, দরকার তখন মাত্র ৯ রান।
মাইকেল ক্লার্ক-স্টিভেন স্মিথের তৃতীয় উইকেট জুটি অসি ক্রিকেটের বর্তমান প্রতীকী চিত্রও বটে। ক্লার্কের ছেড়ে যাওয়া জায়গায় একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন স্মিথই।
অার ক্লার্ক যুগের অবসান ঘটলেও স্মিথ তার দলে পাচ্ছেন মিচেল স্টার্ক, জেমস ফকনারদের মতো ক্রিকেটারদের।
ফকনার হয়েছেন ম্যান অব দি ফাইনাল; আর ৯ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে স্টার্ক হয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড ৪৫ ওভারে ১৮৩/১০ (গ্রান্ট ইলিয়ট ৮৩, রস টেলর ৪০; মিচেল জনসন ৩/৩০, জেমস ফকনার ৩/৩৬)
অস্ট্রেলিয়া ৩৩.১ ওভারে ১৮৬/৩ (মাইকেল ক্লার্ক ৭৪, স্টিভেন স্মিথ ৫৬*, ডেভিড ওয়ার্নার ৪৫; ম্যাট হেনরি ২/৪৬)
ম্যান অব দি ফাইনাল: জেমস ফকনার
ম্যান অব দি টুর্নামেন্ট: মিচেল স্টার্ক