শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছে মুশফিক-লিটনের রেকর্ড জুটি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা মুশফিকুর রহিমের আক্ষেপটা থেকে যাবে ক্যারিয়ারে চতুর্থ ডাবল শতক হাঁকাতে না পারায়। অন্যদিকে অধিনায়ক মুমিনুল হকের সিদ্ধান্তের ভুলে, একটি রিভিউ হারাল বাংলাদেশ। তবে দিনশেষে লঙ্কানদের চেয়ে ২২২ রানে এগিয়ে আছে টাইগাররা।
মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মঙ্গলবার (২৪ মে) বাংলাদেশের ৩৬৫ রানের জবাবে লঙ্কানদের সংগ্রহ ২ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান। ১২৭ বল মোকাবিলায় ৭০ রানে অপরাজিত ছিলেন দিমুথ করুনারত্নে। তাকে সঙ্গ দেওয়া কাসুন রাজিথা ১১ বল মোকাবিলায় অপরাজিত আছেন কোনো রান ছাড়াই।
এর আগে ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে ক্রিজের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের আশা যাওয়া দেখেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক। লিটনের বিদায়ের পরে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। ফলে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি না করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে। ৩৫৫ বল মোকাবিলায় ১৭৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তার ইনিংসে ২১টি চারের মার ছিল।
এদিকে বল হাতে লঙ্কানদের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন টাইগার পেসার এবাদত হোসেন। তার বোলিংয়ে ঘায়েল ওশাদা ফার্নান্দো অবশ্য সাজঘরের ফিরতে পারতেন আগেই। তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আবেদন করলেও, আম্পায়ার সাড়া দেননি আবেদনে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা অধিনায়ক মুমিনুল হক ব্যবহার করেননি রিভিউ সুযোগ। অথচ রিভিউ নিলে সে সময় নিশ্চিত আউট ছিল ফার্নান্দো। পরক্ষণে দিমুথের অধীনে তাইজুলের আবেদনও ফিরিয়ে দেন আম্পায়ার। সে সময় রিভিউ নিলেও, বল ছিল না লাইনে। রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রানে পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা দারুণ সূচনা পায় দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও ওশাদা ফার্নান্দোর ব্যাটে। ওয়ানডে স্ট্যাইলে ব্যাট করে অর্ধশতক তুলে নেন ফার্নান্দো। অন্যদিকে অধিনায়ক করুনারত্নেও করছিলেন দারুণ ব্যাটিং। কিন্তু শতরানের পথে এগিয়ে যাওয়া জুটি ভাঙলেন এবাদত। তার বলে প্রথম স্লিপে নাজমুল শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেন ৯১ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৫৭ রান করা ওশাদা ফার্নান্দো।
এরপর লঙ্কান শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নিজের করা ইনিংসের ৮ম ওভারের প্রথম বলে কুশাল মেন্ডিসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট উপহার দিলেন সাকিব আল হাসান। ৪৯ বল মোকাবিলায় ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন কুশাল।
এর আগে মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ দেড়শ রানের ওপর ভর করে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬১ রান সংগ্রহ করে লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ উইকেট জুটিতে সবার আগ্রহের বিষয় ছিল মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা। কিন্তু ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী এবাদতের ব্যাট হাতে পরিসংখ্যান আশাবাদী হতে দিচ্ছিল না। অবশেষে তাই হয়েছে। এবাদতের রানআউটে ৩৬৫ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ১৭৫ রানে অপরাজিত মুশফিক পাননি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি।
শেষ উইকেট জুটিতে আরও ১৬ রান যোগ করে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। কাসুন রাজিথার ওভারে একটি ডাবল নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে গেছেন এবাদত। মুশফিকের কলেই দৌড়েছিলেন তিনি। বোলিং এন্ডে করুনারত্নের থ্রো থেকে বোলার রাজিথা নিজেই ভেঙে দেন উইকেট। ১৭৫ রানে অপরাজিত মুশফিক সঙ্গীর অভাবে পেলেন না ডাবল সেঞ্চুরি।
লিটনের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ার পর বাংলাদেশের হয়ে একাই লড়ে গেছেন মুশফিকুর রহিম। একপ্রান্তে লিটন-মোসাদ্দেকরা সাজ ঘরে ফিরলেও মুশফিক তার ধৈর্য হারাননি। ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। ৩৫৫ বলে ২১ চারের মারে মুশফিক অপরাজিত থেকে গেছেন ১৭৫ রানে।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই লিটন-মোসাদ্দেককে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। লিটন ফেরেন ১৪১ রান করে। এদিকে ৯৮৭ দিন পর সাদা জার্সিতে ফিরেও শূন্য রানে আউট হয়েছেন মোসাদ্দেক।
এরপর তাইজুলের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি করেন মুশফিক। তবে ফার্নান্দোর বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তাইজুল। এরপর খালেদও ফিরে যান খাতা খোলার আগেই।
এদিকে ৫ উইকেটে ২৭৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ প্রথম সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে করেছে ৮৪ রান। লঙ্কান দুই পেসারের কাছেই দিশেহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বাংলাদেশের ৯ উইকেটের সবকটি উইকেটই পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার দুই পেসার। কাসুন রাজিথা নিয়েছেন ৫ উইকেট, যা তার টেস্ট ইতিহাসে প্রথম। আর অসিথা ফার্নান্দো নিয়েছেন ৪ উইকেট।