রাশিয়া থেকে বাড়তি তেল কেনার ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করছে চীন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তির বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ চলতি সপ্তাহে এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে চীনের ব্যবসায়ীদেরকে ইউয়ানের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দেয়া হবে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের চলমান সংকটের কারণে বর্তমানে রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে। দাম বেড়ে যাবার আগে সস্তায় চীন তার অপরিশোধিত তেলের ভাণ্ডার পূর্ণ করতে চায়। এজন্য বেইজিংয়ের নজর এখন রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দিকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো ব্লুমবার্গকে জানিয়ে, চুক্তির শর্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং এ ধরনের চুক্তি হওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়নি।
ইন্ট্যারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রাশিয়া থেকে তেলভর্তি কার্গো জাহাজ চীনে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার মোট রপ্তানির ২৭ শতাংশ তেল কিনেছিল চীন, যার মূল্য ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও এটি চীনের মোট তেল আমদানির মাত্র ১৬ শতাংশ। সরকারি চুক্তি অনুযায়ী, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল রাশিয়ার তেল পাচ্ছে চীন।
চলতি মে মাসে রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে রেকর্ড করেছে চীন। এ মাসে প্রতিদিন রাশিয়া থেকে প্রায় ১১ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে দেশটি। অথচ এ বছরের প্রথম তিন মাসে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৭ লাখ ও গত বছর গড়ে রাশিয়া থেকে ৮ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছিল দেশটি।
জ্বালানি নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের মতে, চীনের কাছে ৯২ কোটি ৬১ লাখ ব্যারেল তেলের মজুদ রয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে তেলের মজুদ ছিল ৮৬ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল। বর্তমানে চীনে যে পরিমাণে তেল মজুদ রয়েছে তা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ছয় শতাংশ কম।
রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তেলের বড় কিছু ক্রেতা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করে। ব্যবসায়ীরা জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর আগের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি প্রায় ২৯ ডলার কমে রাশিয়ার তেল পাচ্ছেন ক্রেতারা। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের তেলের চেয়ে যা অনেক কম।
যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে তাদের নিষেধাজ্ঞা মেনে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও রাশিয়া থেকে তেলসহ অন্যান্য জ্বালানি কেনা বন্ধ করবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো এখনও রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। তেল কিনছে ভারতও।