ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে তিনি শুধু কৃষিপণ্য উৎপাদনই করেন না; নিজ বাগানের সবজি নিজে খুচরা বাজারে বিক্রিও করতে দেখা যায় তাকে। দিনমজুরের মতো প্রতিদিন কাজ করেন নিজ সবজি বাগানে। তবে, কোনো অভাব-অনটন থেকে নয়, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ওই মানুষটি কৃষির প্রতি নেশা থেকেই এসব করছেন।
ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে বিক্রি করছেন সবজি!
ড. আবু বকর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। উচ্চশিক্ষা নিয়েও মূল পেশা হিসেবে এখন কৃষিকেই বেছে নিয়েছেন।
সরেজমিন রাঙামাটিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নিজের বাগানে রোপণ করা কচুর লতি নিজেই কুলির মতো বহন করে নিয়ে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে বসে বিক্রি করছেন ড. প্রিন্স।
ড. প্রিন্স সময় সংবাদকে জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
কৃষির প্রতি তার নেশার গল্পে তিনি বলেন, আয়েশি জীবন ত্যাগ করে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে শ্বশুরবাড়ির গ্রামে নিয়মিত বসবাস শুরু করেন তিনি। কয়েক একর জমির ওপর গড়ে তোলেন ‘কিষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামের একটি কৃষি খামার। উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৪ সালেই তার যাত্রা শুরু। তার নিজ খামারে বিদেশি ড্রাগন ফল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেন।
ময়মনসিংহে ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক চাষ মূলত তার হাত দিয়েই প্রথম শুরু হয়। পাশাপাশি শুরু করেন দেশীয় মাল্টার চাষ।
তিনি আরও জানান, নিজ খামারে ড্রাগন ফল ও মাল্টার পেছনে তার পাঁচ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দুটি ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ‘কিষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগের’। ময়মনসিংহ সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলায় তার খামারে উৎপাদিত মাল্টা ও ড্রাগন ফল পাইকারিভাবে বিক্রি হয়। এমনকি রাজধানীতেও তার বাগানের ড্রাগন ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। কিছুদিন আগে থেকে তার খামারে শুরু হয়েছে কচুর লতির চাষাবাদ। সবজির মধ্যে এই পণ্যের বেশ পুষ্টিগত গুণাগুণ রয়েছে, তাই এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।
কৃষি নিয়ে তার ভাবনা সম্পর্কে সময় সংবাদকে জানান, কৃষিতে তার বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে; তবে কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়। কৃষিকে তিনি ভালোবেসে এ প্রকল্প করেছেন। কৃষিকাজকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
বাংলাদেশে কৃষির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের শিক্ষিত ছেলেরা চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষি নিয়ে কাজ করলে আরও ভালো করতে পারবে। ড. আবু বকর সিদ্দিকের কৃষির প্রতি ভালোবাসা এলাকাবাসীকে এ কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করছে।