যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার কোম্পানির সঙ্গে তার ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ মে) এক ঘোষণায় এ কথা বলেন ইলন। এর জন্য টুইটারের ফেক অ্যাকাউন্ট নিয়ে কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন টেসলা প্রধান।
এক টুইটার বার্তায় মাস্ক বলেছেন, টুইটারে স্প্যাম বা জাল অ্যাকাউন্ট পাঁচ শতাংশেরও কম ব্যবহারকারীর প্রতিনিধিত্ব করে। দাবির পক্ষে বিস্তারিত তথ্য না আসা পর্যন্ত ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে এর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথম থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে আসছেন মাস্ক। গত তিন মাসে টুইটারে নতুন ব্যবহারকারী বেড়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ।
করোনার মহামারির পর সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে মাস্কের টুইটার কেনার আগ পর্যন্ত সংস্থাটি বেশ কয়েকটি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। যেমন, মাস্ক টুইটার কেনার পর বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটারে ব্যয় করবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এরপর টুইটারের মালিকানা কেনার জন্য গত ২৫ এপ্রিল এর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি করেন মাস্ক। এজন্য তাকে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছে।
বিশাল পরিমাণ এই ঋণ শোধ করার জন্য শেষ পর্যন্ত তাকে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন মার্কিন এই ধনকুবের। পাশাপাশি খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে সংস্থার কিছু উচ্চপদস্থ কর্মীর বেতন কমানো হতে পারে বলেও ঋণদাতাদের জানান তিনি।
এদিকে টুইটারের ভোক্তা ও রাজস্ব বিভাগ দেখভাল করা দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সামাজিক মাধ্যমটি থেকে সরে যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) এক মেমোতে কর্মীদের এমন তথ্য জানিয়েছেন ক্ষুদে ব্লগটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরাগ আগারওয়াল। খবর রয়টার্সের।
মেমোতে আগারওয়াল বলেন, অধিকাংশ নিয়োগ বন্ধ রাখবে টুইটার। চলমান নিয়োগ প্রস্তাবগুলোও পর্যালোচনা করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তার কোনোটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে কি না।
এ সিদ্ধান্তের কিছুটা দায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ওপরও বর্তায়। কারণ গেল বছরে ব্যবহারকারী ও রাজস্ব বাড়ানোর যে মাইলফলক নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পূরণ করতে পারেনি সামাজিক মাধ্যমটি। এখন নতুন করে যে লক্ষ্যমাত্রার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে সফল হওয়ারও আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না পরাগ আগারওয়াল।
তিনি বলেন, আমাদের টিম, লোক নিয়োগ ও খরচ নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।
২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সাড়ে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বার্ষিক রাজস্ব ও দৈনিক ৩১ কোটি ৫০ লাখ ব্যবহারকারীর মাইলফলক ছোঁয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল টুইটার। কিন্তু সাম্প্রতিক আয়ের প্রতিবেদনের পর সেই লক্ষ্যমাত্রা তুলে নেওয়া হয়েছে।
টুইটারের ভোক্তা শাখা কেইভান বেকপুর ও রাজস্ব বিভাগের দেখভাল করছিলেন ব্রুস ফালক। বৃহস্পতিবার টুইটার বার্তায় তারা জানিয়েছেন, কোম্পানি থেকে তাদের বিদায় নেওয়া স্বেচ্ছায় না।
বেকপুর বলেন, টিমকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন পরাগ। বিষয়টি আমাকে জানিয়ে টুইটার ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন।
বর্তমানে পিতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন কেভিন বেকপুর। আর টুইট পোস্টে ব্রুস ফালক লিখেছেন, আমি আরও খোলাসা করে বলতে চাই, পরাগ আমাকে বরখাস্ত করেছেন।
পরবর্তী সময়ে পোস্ট মুছে দিয়েছেন তিনি। টুইটার থ্রেডে টিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘বেকার’ হিসেবে নিজের বায়ো হালনাগাদ করেছেন। ব্রুস ফালক বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। ত্রৈমাসিক রাজস্ব মিথ্যা বলছে না, গুগল খুঁজে দেখতে পারেন।
বেকপুরের ছুটিকালীন টুইটারের ভোক্তা ইউনিটের নেতৃত্ব দিয়েছেন জেই সুলিভান। এবার বিভাগটির স্থায়ী নেতৃত্ব পাবেন তিনি। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব আসার আগ পর্যন্ত রাজস্ব বিভাগও থাকবে তার নিয়ন্ত্রণে।