মা দিবসের শুরুর কথা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


কীভাবে এলো এই ‘মা দিবস’? মা দিবসের কথিত ইতিহাস প্রচলিত রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দিবসটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলর উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব -আনিসুর সুমন

মা- ডিকশোনারির ছোট শব্দ, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী এবং মূল্যবান। যে শব্দের মাঝেই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মায়া, অনুভূতি কিংবা অধিকার প্রতিষ্ঠিত। মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত এবং উদযাপিত হয়ে আসছে ‘মা দিবস’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে আজ দিবসটি পালিত হলেও অন্যান্য দেশে আবার ভিন্ন ভিন্ন দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। এই যেমন বাংলাদেশে আজ (মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার) দিবসটি পালিত হলেও কসোভোয় ফেব্রুয়ারির প্রথম রবিবার মা দিবস পালিত হয়। নরওয়েতে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রবিবার, জর্জিয়ায় ৩ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে ৬ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে দেশটির রানি সিরিকিতের জন্মদিনে অর্থাৎ ১২ আগস্ট এবং সিঙ্গাপুরে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়। তার মানে মা দিবসের নির্দিষ্ট কোনো একক তারিখ বা দিন ধার্য নেই। তবে তারিখ যা-ই হোক না কেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত রবিবারেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

কীভাবে এলো এই ‘মা দিবস’? মা দিবসের কথিত ইতিহাস প্রচলিত রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দিবসটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলর উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুবের সময়ে এবং তার পর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে উৎসবটি পালিত হতো। প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরও একটি ছুটির দিন ছিল। এদিন মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে নানান জিনিস উপহার দেওয়া হতো। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হতো।

মা দিবস নিয়ে আরও একটি গল্প প্রচলিত আছে। যেখানে আধুনিক মা দিবস কীভাবে এলো তার গোড়াপত্তনের গল্প ইতিহাস হয়ে আছে। বলা হয়ে থাকে আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবসের প্রচলন করেন। ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ক্রমেই দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য শুরু হয়। এতে লঙ্ঘিত হয় দিবসটির মূল চেতনা। মর্মাহত হন আনা। দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন আনা। বর্তমানে বিশ্বে ৪৬টিরও বেশি দেশে দিবসটি পালিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *