বগুড়া জেলা শহরের উপকণ্ঠে সম্প্রসারিত পৌর এলাকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড ধরমপুর অ্যান্টিক পল্লী। এখানে দিনরাত কাজ করছে ২০ গ্রামের ৩ হাজারের অধিক নারী-পুরুষ। এই ২০টি গ্রাম থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার অ্যান্টিক গহনা যায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এখান থেকে মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকার অ্যান্টিকের গহনা পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে।
এখন সোনার দাম আাকাশচুম্বি হওযায় মানুষ বেছে নিয়েছে তামা, পিতল ও দস্তার তৈরি এসব অ্যান্টিকের গহনা। সোনার গহনার মতো চুরি ও ছিনতাইয়ের ভয় থাকবে না, তাই অ্যান্টিকের তৈরি গহনার প্রচলন শুরু হয়েছে। এভাবে ক্রমে অ্যান্টিকের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।
ভারত ও দেশের যশোর থেকে কাঁচামাল এনে বগুড়ার ধরমপুরে কারিগররা সুনিপুণ হাতে তৈরি করছে অ্যান্টিকের সব ধরনের গহনা। দেখে বুঝা যায় না যে, এই গহনা সোনা দিয়ে তৈরি নয়।
আগে সোনার গহনা তৈরির জন্য কয়লার আগুনে পিতলের নল দিয়ে গহনার জোড়া লাগানো হতো। এখন প্রযুক্তি পাল্টে গেছে। করিগররা এখন গ্যাসের পটে চাপ দিয়ে অ্যান্টিকের গহনাকে জোড়া লাগান। সোনার গহনার মতো অ্যান্টিকের গহনার কাজ প্রায় একই রকম। একটি মোমের ছাঁচে অ্যান্টিকের ধাতুটি জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় নানা ডিজাইনের গহনা। এসব অ্যান্টিক তৈরি হয় তামা, পিতল ও দস্তার সংমিশ্রণে। নিপুণ হতের কারুকাজে তৈরি হচ্ছে চোখ ধাঁধানো অ্যান্টিকের এসব গহনা।
ধরমপুর বাজার দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সামসুর রহমান সবুজ জানান, করোনা তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তারা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ঈদের বাজারেও ধরমপুরের তৈরি অ্যান্টিকের গহনার চাহিদা বেড়েছে। নারীরা একটা সোনার গহনা পরলে সেইসাথে আরো দুটি অ্যান্টিকের গহনা পরছেন।
ধরমপুর বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন জানান, সোনার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যান্টিকের গহনার চাহিদা বেড়েছে। এখানকার অনেকে যারা রিকশা চালাতো, দিনমজুর ছিল বা অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ছিল, তাদের অধিকাংশই প্রথমে অ্যান্টিক কারখানার শ্রমিকের কাজ করেছে। এরপর তারা নিজেরাই এখন অ্যান্টিক শিল্পের মালিক বনে গেছে।
স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা এই অ্যান্টিক শিল্পের জন্য সরকারি সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত বগুড়া বিসিক।
বগুড়া বিসিকের ডিজিএম মাহফুজুর রহমান জানান, বিসিক ঋণ সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। বিসিক এই খাতে সব রকম সহায়তা দিতে প্রস্তুত। অনেক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে, কিন্তু অ্যান্টিক কারিগররা এখনো কোনো সহায়তা চায়নি।
সূত্র : বাসস