রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গতকাল শুক্রবার বেশির ভাগ ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। তবে উত্তরাঞ্চলের উদ্দেশে দুটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে। সকালে কমলাপুরে যাত্রীর চাপ থাকলেও দুপুরে সেটা কমে যায়। আর বিকেলের পর থেকে ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে অনেকে টিকিট থাকার পরেও ট্রেনে উঠতে পারেনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকা থেকে আন্ত নগর, এক্সপ্রেস, লোকাল, কমিউটারসহ ১২২টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এসব ট্রেনে ৬৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আন্ত নগর ও ঈদের জন্য চালু করা বিশেষ ট্রেনের আসন আছে ৩৩ হাজার এবং লোকাল, কমিউটার, এক্সপ্রেস ট্রেনে ৩০ হাজার যাত্রীর ধারণক্ষমতা রয়েছে।
কমলাপুর থেকে গতকাল চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা বিলম্বে ৭টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়। আর খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৭টা ১৫ মিনিটে যাওয়ার কথা থাকলেও ৯টা ৩৬ মিনিটে ছাড়ে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের ট্রেনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেছে।
ঈদ যাত্রার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি কোনো ট্রেনই যেন বিলম্বে না ছাড়ে। যেহেতু এই ট্রেন দুটির গন্তব্য অনেক দূর, ফলে স্টেশনগুলোতে যাত্রাবিরতি দিয়ে ঢাকায় আসতে কিছুটা সময় লাগে। তা ছাড়া জয়দেবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সিঙ্গল লাইন হওয়ায় ট্রেনগুলো ঢাকায় আসতে সময় লাগছে। ’
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার টিকিট নিয়েছিলেন মো. হারুন। রাজধানীর উত্তরায় থাকেন তিনি। বিমানবন্দর থেকেই ট্রেনে ওঠা তাঁর জন্য সুবিধার হলেও তিনি চলে এসেছেন কমলাপুরে। জানতে চাইলে বলেন, ‘বিমানবন্দরে যে বাজে অবস্থা থাকে, তাতে বউ ও বাচ্চা নিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই একটু সময় নিয়ে এখানে চলে এসেছি। এতে নিজের সিটে বসতে পারব। ’
কমলাপুরে ট্রেনের ছাদে কাউকে উঠতে দেওয়া হচ্ছিল না। পুলিশ এসে ছাদ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছিল। ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা প্রসঙ্গে কমলাপুরের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আমিনুল হক বলেন, ‘কমলাপুর থেকে কোনোভাবেই যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কেউ যেন ট্রেনের ছাদে উঠতে না পারে, সে জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’
সন্ধ্যার পর থেকে ট্রেনে যাত্রীর চাপের যে পরিস্থিতি তাতে কোনো যাত্রীর টিকিট আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই স্টেশনগুলোতে টিকিট দেখিয়ে যাত্রীদের ঢুকতে দেখা যায়। কাউন্টারে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে যাদের টিকিট নেই তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে হাতে লিখে টিকিট তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। তবে দাঁড়িয়ে যাওয়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আসনে বসা যাত্রীদের। অনেকের কাছে টিকিট থাকলেও নিজের আসন পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছতে পারেনি। টিকিট থাকার পরও ট্রেনে উঠতেই পারেনি, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
শফিকুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘যেন যানজটে না পড়তে হয় সে জন্য ট্রেনে বাড়ি যেতে চেয়েছি। ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগেই স্টেশনে চলে এসেছি। নয়তো ট্রেনে উঠে নিজের জায়গায় বসতে পারব না, সেই অভিজ্ঞতা আছে। ঈদে বাড়ি যাচ্ছি, সব কষ্ট ছাপিয়ে এটাই বড় আনন্দ। ’