টিকিট ছাড়া স্টেশনে ঢোকা নিষেধ!

Slider জাতীয়


ঢাকা: আর মাত্র দুই বা তিন দিন বাদে সারাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। তাই আনন্দ ভাগাভাগি করে ঈদ উৎসব করতে রাজধানী ছেড়ে বাড়ির পথে ছুটেছেন অনেকই।

কেউ পরিবার নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন, কেউ বা পরিবারের টানে ছুটে যাচ্ছেন বাড়িতে। এই যাত্রার কয়েকদিন আগেই টিকিট সংগ্রহের কাজটিও শেষ করেছেন। এবার বাড়ি ফেরার পালা, তাই ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা।
এদিকে, যারা টিকিট সংগ্রহ করেছেন শুধুমাত্র তারাই বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ঢুকতে পারছেন। টিকিট ছাড়া কেউ ঢুকতে পারছেন না। এদিকে স্টেশনের প্লাটফর্মে টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রী থাকলেও তাদের বের করে দিচ্ছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

যারা টিকিট সঙ্গে নিয়ে আসছেন, শুধু তারাই প্রবেশ করতে পারছেন। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা তাদের ব্যাগ নিয়ে স্টেশনের বাইরেই অপেক্ষা করছেন। তারা ভেতরে ঢোকার আকুতি জানালেও নিরাপত্তা প্রহরীরা বারবার তাদের আটকে দিচ্ছেন।

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্টেশনের নিরাপত্তা ও ট্রেনে টিকিট ছাড়া ভ্রমণ রোধ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্টেশনের প্লাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীদের ভোগান্তিও অনেকাংশে কমবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়৷

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঈদের সময় স্টেশনে অনেক লোকসমাগম হয়। এরমধ্যে টিকিট যাত্রী, টিকিট ছাড়া যাত্রীসহ হকার টোকাই ও বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এতে অনেকেই আবার ভোগান্তির শিকার হন। অনেকের টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়। মূলত যাত্রীদের ভোগান্তি-দুর্ভোগ কমাতে ও তাদের যান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছি। সেই সঙ্গে স্টেশন কর্তৃপক্ষও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে, দৈনন্দিন জীবিকার তাগিতে রাজধানীতে ছুটে আসা অনেকেই ঈদের আগে বাড়ি ফিরে যেতে ভিড় করছেন বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। অগ্রিম টিকিট না কাটায় তাদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সেখানে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহ করেই ট্রেনে চড়বেন। তবে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।

ঢাকার বেসরকারি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ফরহাদ হোসাইন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। প্রতিষ্ঠানের ছুটি হযে যাওয়ার কারণে তিনি বাড়ি যাচ্ছেন। পাঁচদিন আগে টিকিট সংগ্রহ করেছেন এই যাত্রী। শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

এই যাত্রী বলেন, এবছর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কাটতে হয়েছে। এখন স্টেশনে এসে দেখি টিকিট ছাড়া যাত্রী প্রবেশ নিষেধ। তবে আমরা নিরাপদে প্রবেশ করেছি। এই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। এতে যাত্রী ছাড়া রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে অহেতুক ভিড় নেই। এটা ভালো হয়েছে। কোনো ভোগান্তিও নেই। তবে যে পরিমাণে যাত্রী চাপ হয় তাতে এই নিয়ম কয়দিন থাকে বা স্টেশন কর্তৃপক্ষ ধরে রাখতে পারে সেটাও ভাবার বিষয়।

তিনি বলেন, যারা স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে ট্রেনে চড়েন, সরকার তাদের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমিয়ে রাখতে পারেন। কারণ তারা ট্রেনে কোনো আসন পাচ্ছেন না, দাঁড়িয়ে যাবেন। সেই হিসেবে ভাড়া কিছুটা কম হলে হয়তো বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণের সংখ্যা কমে যাবে।

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে প্লাটফর্মের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) ত্রিদীপ দে বলেন, স্টেশনে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও অহেতুক লোক বা সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আমরা তাদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন সেটি নিশ্চিতে আমরা তৎপর আছি।

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান বলেন, স্টেশনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ ও ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের রুখতে স্টেশনে টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও অনেকেই ভেতরে ঢুকে পড়েন। তবে স্টেশনের টিটিরা তাদের তল্লাশি করছেন। যাদের টিকিট নেই তাদের চলে যেতে বলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যাত্রীরা যাতে কোনো দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও আমাদের লোকজন তৎপর রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *