ঈদের আগেই অস্থির তেলের বাজার, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


ঈদের আগে আবারো পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ভোজ্য তেল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এবং বেশি দাম দিয়েও খুচরা বাজারে অনেক দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

খুচরা বা পাইকারি বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, তেল মিলগুলো বা আমদানিকারকরা বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।

আমাদানিকারক বা মিলগুলোর পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

তবে সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগের ব্যাপারে আজ কয়েকটি মিলে অভিযান চালানো হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রফতানি নিষিদ্ধ করার পর দেশের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

রমজান শুরুর আগে দেশের বাজারে পাম অয়েল এবং সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তখন সরকার হস্তক্ষেপ করে দাম নির্ধারণ করার পর সেই দফায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন আবার ঈদের আগ মুহূর্তে ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

খুচরা বাজারে দাম চড়া
ঢাকায় চাকরিজীবী সাবরিনা মমতাজ নিয়মিত বাজার করেন। তিনি দেখছেন গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে সয়াবিন এবং পাম অয়েলের দাম লিটার প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তিনি বলেছেন, বেশি দাম দিয়েও অনেক মুদি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অভিজ্ঞতাও তার হয়েছে।

‘আমরা যখন বাজারে যাই, সব দোকানে যে তেল ঠিকমতো পাব, সেটাও বলা মুশকিল। কারণ এক দোকানে থাকলে অন্য দোকানে স্টকে তেল নাই। যে দোকানে তেল আছে, সে দোকানে তেল প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা বা ১৮০ টাকায় বিক্রি করছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতিটা কষ্টকর,’ বলছেন সাবরিনা মমতাজ।

তেল মিলকে দুষছেন খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা
ভোজ্য তেলের বাজারে এই পরিস্থিতির জন্য বিক্রেতারা চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কথা বলেছেন।

ঢাকায় মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের একাধিক খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করেছেন, তারাও বেশি দাম দিয়ে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না।

ঢাকার বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার থেকে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা তেল সরবরাহে সঙ্কটের জন্য বড় আমদানিকারক বা তেল মিলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

‘মিল মালিক যারা উৎপন্ন এবং বিপণন করেন, তারা বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না এবং যতটা সরবরাহ করা হচ্ছে, তা সরকারের নির্ধারিত দামে নয়। সেজন্য তেলের বাজার অস্থির হয়েছে,’ অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলার।

রমজান মাসে ভোজ্য তেলের বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আড়াই লাখ টন তেলের যোগান রাখার টার্গেট করা হয়েছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাভাবিক সময়ে এক মাসে এই চাহিদা থাকে এক লাখ টন। রমজানে তেলের চাহিদা যা ধরা হয়, তার ৬৫ শতাংশই হচ্ছে পাম অয়েল।

এই পাম অয়েল আমদানির জন্য বাংলাদেশ মূলত ইন্দোনেশিয়ার ওপর নির্ভরশীল এবং ৮০ শতাংশই সেখান থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। কয়েক দিন আগে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রফতানি বন্ধ করে দেবার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের তেলের বাজার অস্থির হয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবও রয়েছে বলে আমদানিকারকদের অনেকে বলছেন।

তবে তেল মজুদ থাকা সত্বেও সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আমদানিকারকরা।

অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানি করে তা দেশে আবার উৎপাদন করে যে মিলগুলো, সেই মিলগুলোর মধ্যে অন্যতম টি কে গ্রুপের পরিচালক সফিউল আথার তাসলিম বলেছেন, মিলগুলোর বাইরে কোথাও সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা- এমন সন্দেহ তারা করছেন।

‘মিলগুলো থেকে সরবরাহ আগের মতোই আছে। বরং আমরা গত কয়েক দিনে অস্বাভাবিক চাহিদা দেখছি।’

সফিউল আথার তাসলিম বলেন, চাহিদাটা অ্যাবনরমাল মনে হওয়ার অনেক কারণ আমরা পেয়েছি। যেমন একজন ডিলার আমার কাছ থেকে ছয় মাসে ভোজ্য তেল নিয়েছে দুই শ’ কার্টুন। সে এখন এক দিনে এক সপ্তাহের জন্য চাচ্ছে পাঁচ শ’ কার্টুন।

‘এরকম অ্যাবনরমাল চাহিদা কিন্তু আমরা পাচ্ছি। আমরা কিন্তু কখনো ঈদের আগে এরকম পরিস্থিতি দেখি নাই,’ বলেন সফিউল আথার তাসলিম।

সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বুধবার চট্টগ্রামে এবং নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি মিলে অভিযান চালিয়েছে।

এই অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, তাদের অভিযানে মিলগুলোর সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ এখনো মেলেনি।

‘পরিস্থিতি নিয়ে এখন একটা ব্লেমগেম হচ্ছে। কিন্তু আমরা চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের মিলে গিয়ে দেখেছি। সেখানে সরবরাহে কোনো ঘাটতি পাওয়া যায়নি,’ বলেন সফিকুজ্জামান।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *